নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন করে আন্দোলন শুরু করার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। আন্দোলন শুরুর লক্ষ্যে দলটি একের পর এক বৈঠক করছে। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, এবার আন্দোলন বিএনপি একা করবে না বরং তারা যুগপৎ ভাবে আন্দোলন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য যে, গত বছরের ১২ জুলাই বিএনপির পক্ষ থেকে একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। সেই একদফা আন্দোলনের আজ বর্ষপূর্তি হয়েছে। কিন্তু একদফা আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়ে। ২৮ অক্টোবরের বিএনপির আত্মঘাতী তৎপরতা এবং জ্বালাও-পোড়াও ভাঙচুরের প্রেক্ষিতে এই আন্দোলন এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
নতুন করে আন্দোলন শুরুর লক্ষ্যে বিএনপি যেমন নিজেদের স্থায়ী কমিটির মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করছে, তেমনি যুগপৎ আন্দোলন করার জন্য সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথেও বৈঠক করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আর এই সমস্ত বৈঠক থেকে বিএনপি আন্দোলনের পাঁচটি ইস্যু চিহ্নিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই সমস্ত ইস্যু গুলোর মধ্যে রয়েছে।
১. বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি: বিএনপি এখন আন্দোলনের প্রথম ইস্যু হিসাবে রাখতে চায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুটি। বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই বিএনপি প্রধান লক্ষ্য এমনটিই জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকেই গণতন্ত্র মুক্তির আন্দোলনের পথে এগিয়ে নিতে হবে।
২. কোটা সংস্কার আন্দোলন: কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে। তবে এই আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপি যুক্ত হয়নি এখনও। তবে বিএনপি এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে বলে নিশ্চিত করেছেন স্থায়ী কমিটির অন্তত দু’জন সদস্য। তারা বলেছেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই আন্দোলনের শুধু সমর্থন নয়, এই আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরিভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য লন্ডন থেকে বার্তা এসেছে। আর এই কারণেই কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার ব্যাপারে বিএনপি কাজ শুরু করেছে বলেও বিএনপির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।
৩. শিক্ষকদের পেনশন স্কিম আন্দোলন: পেনশন স্কিম আন্দোলন নিয়েও বিএনপির নেতৃবৃন্দ নতুন করে সংগঠিত হতে চায়।বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেখানে বিএনপিপন্থী শিক্ষক রয়েছেন সেই শিক্ষকদেরকে তারা একত্রিত করতে চান, যুক্ত করতে চান এবং এই আন্দোলন যেন কোনও ভাবেই সমঝোতার পথে না যায় সে জন্য বিএনপিপন্থী শিক্ষকদেরকে ইতোমধ্যে বার্তা দেওয়া হয়েছে।’
৪. দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এটি হলো বিএনপির সঙ্গে যারা সমমনা এবং যুগপৎ আন্দোলন করছে তাদের প্রধান দাবি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বিএনপি ও আন্দোলনে আগ্রহী এবং সেটিই যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচির মধ্যে রাখতে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই বলে জানা গেছে। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে কি ধরনের আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে সেই নিয়ে নিজেদের মধ্যে তারা আলাপ আলোচনা করবেন বলেও জানা গেছে।
৫. দুর্নীতি এবং অর্থপাচার: দুর্নীতি, অর্থপাচার ইস্যুকে বড় করে সামনে আনতে চায় বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। সাম্প্রতিক সময়ে যে দুর্নীতির খবরগুলো প্রকাশিত হচ্ছে, তার সাথে সরকারকে কিভাবে জড়ানো যায় এবং সরকারের কারণেই অর্থপাচার এবং অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে এমন বক্তব্য সামনে রেখে তারা কিছু কর্মসূচি পালন করতে চায়।’
তবে, বিএনপির পাঁচটি আন্দোলনের ইস্যুর সঙ্গে একমত নন যুগপৎ আন্দোলনের অনেকেই। তারা মনে করেন, যেহেতু খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুটি আদালতের ইস্যু এবং এটি দলীয় ইস্যু সেজন্য এখন সার্বজনীন ইস্যুগুলোকে সামনে আনা উচিত। বিশেষ করে যে সমস্ত ইস্যুতে জনগণ সম্পৃক্ত হবে সেই ইস্যু গুলোকে নিয়েই আন্দোলন করা উচিত। তারা মনে করেন যে, আন্দোলন যদি তীব্র হয় এবং সরকারের ওপর যদি চাপ সৃষ্টি হয় তাহলে খালেদা জিয়ার মুক্তি আপনা আপনি হবে। তবে, বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যু থেকে সরে আসতে রাজি নয়।
বিএনপির নেতারা বলেছেন, যুগপৎ আন্দোলনের সাথে যুক্ত সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর যদি শেষ পর্যন্ত সক্রিয় নাও থাকে তাহলে বিএনপি একাই খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুতে আন্দোলন অব্যাহত রাখবে।’