নিজস্ব প্রতিবেদক: মেজর হাফিজ এবং সাকিব আল হাসানের ভাইরাল ছবির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে নির্বাচনের আগে বিএনপির অনেকেই নির্বাচনে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিল। তারা বিএনএম বা কিংস পার্টি গঠনেও তৎপর ছিলেন। মেজর হাফিজ সুবিধা করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত বিএনএমে যোগ দেননি। এখন তিনি আবার সাচ্চা বিএনপির সাজার একটি নাটক করছেন। তবে সুযোগ সুবিধা পেলে কে কি করতে পারে তার একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রকাশিত হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিনের ছবিতে।
বিএনপির বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, মেজর হাফিজ একা না, বিএনপির অনেক নেতাই কিংস পার্টিতে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তারা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। অনেকে বিভিন্ন মোটা অঙ্কের টাকাও চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিংস পার্টিতে যেতে পারেননি। কারণ লাভ ক্ষতির হিসেব মিলিয়ে বা যে পরিমাণ টাকা পয়সা তারা দাবি করেছিলেন, সেই পরিমাণ টাকা পয়সা না পাওয়ার কারণে তারা কিংস পার্টির মিশন থেকে সরে এসেছেন। এরকম তালিকায় বেশ কিছু বিএনপির শীর্ষনেতার নাম রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, মেজর হাফিজ এর যেমন কিংস পার্টি বিএনএম এর চেয়ারপার্সন হওয়ার কথা ছিল ঠিক তেমনই ভাবে তৃণমূল বিএনপিতে যাওয়ার কথা ছিল বিএনপির আরেকজন স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য নজরুল ইসলামের। তাকেও এ নিয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনিও প্রস্তাবটি ভেবে দেখবেন বলে জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সেখান থেকে সরে আসেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতারও তৃণমূল বিএনপিতে যোগদানের তথ্য ছিল। তবে একাধিক সূত্র বলছে, শাহজাহান ওমর যেমন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, বিএনপিতে দুই রকমের মতামত ছিল। তার মধ্যে একটি মতামত ছিল তারা নতুন একটি মোর্চা করবেন। এই মোর্চা গঠনের ক্ষেত্রে তাদের প্রথম পছন্দ ছিল ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার গঠিত দল তৃণমূল বিএনপি। এই দলে যাওয়ার জন্য বিএনপির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা প্রায় মুখিয়ে ছিলেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে নজরুল ইসলাম খান ছাড়াও বিএনপির সাবেক ছাত্রদল নেতা এবং বিএনপির নেতা আমান উল্লাহ আমানের নাম পাওয়া গেছে। এছাড়া আসাদুজ্জামান খান রিপনের তৃণমূল বিএনপিতে যোগদানের কথা প্রায় চূড়ান্ত হয়েছিল বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।’
তবে এরা প্রত্যেকেই এ ধরনের যোগদানের খবর অস্বীকার করেছেন। অন্যদিকে বিএনএমে মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন, বিএনপির সাবেক নেতা শওকত মাহমুদের যোগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত ছিল। এ ছাড়াও বিএনপির আরেক নেতা এহসানুল হক মিলন বিএনএমে যোগ দেবেন বলে গুঞ্জন ছিল এবং তাদের সাথে কথাবার্তাও প্রায় চূড়ান্ত হয়েছিল। এ ছাড়াও বিএনপির আরেকজন নেতা শামসুজ্জামান দুদুর বিএনএমে যোগদানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। দুদুর সঙ্গে মেজর অবসর প্রাপ্ত হাফিজের বৈঠকের কথাও এখন বাজারে চাউর হয়েছে। তবে মেজর হাফিজ যেমন এই ঘটনাকে এখন অন্য খাতে ধামাচাপা দিচ্ছেন, তাকে নিয়ে কুৎসা রটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ঠিক তেমনই যেসমস্ত নেতাদের বিএনএমে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।’
তবে এদের কারও ব্যাপারে সরকারের খুব একটা আগ্রহ ছিল না। সরকারের আগ্রহ ছিল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ব্যাপারে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে আলাদা একটি বিএনপি করার ব্যাপারে সরকারের আগ্রহ ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে না পাওয়ার পর ক্ষমতাসীন সরকারও বিএনএম বা তৃণমূল বিএনপি নিয়ে খুব একটা আগ্রহী হননি। ফলে তাদেরকে পৃষ্টপোষকতা করা থেকেও সরে আসে। হালুয়া রুটির ভাগ পাবেন না এটা জানার পর মেজর হাফিজ সহ অন্যান্য বিএনপি নেতারা কিংস পার্টির ষড়যন্ত্র থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে নেন। তবে এই ষড়যন্ত্রের সব তথ্যই এখন ফাঁস হয়ে গেছে। এই ষড়যন্ত্রকারীরাই কি বিএনপিতে আগামী দিনে সরকার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিবে-এটিই এখন কর্মীদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।’