১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে টেকসই সংস্কারের আশ্বাস উপজেলা প্রকৌশলীর
শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: বাঁশখালী প্রধান সড়কের কালীপুর ইউনিয়নের সলিয়া বাপের পুল থেকে বাঁশখালীর দৃষ্টি জুড়ানো বাহারছড়া সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার সড়কের বাহারছড়া বশির উল্লাহ মিয়াজি বাজার পয়েন্টে ‘বশির উল্লাহ মিয়াজি বাজার বেইলি ব্রিজটি’র অবস্থান। সম্প্রতি বেইলি ব্রিজের বেশ কয়েকটি পাটাতনে মরিচা ধরে ভেঙ্গে পড়ায় ব্রিজের সংযোগ সড়কের সাধারণ যাত্রীদের চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এমনকি দূরদূরান্ত থেকে উপজেলার সম্ভাবনাময় পর্যটনটন স্পট বাহারছড়া সমুদ্র সৈকতে যাতায়াতকারী পর্যটকদেরও পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার কবলে পতিত হচ্ছে যাত্রী ও মালবাহী নানা যানবাহনসহ সাধারণ পথচারী।
সরেজমিনে দেখা যায়, ‘বশির উল্লাহ মিয়াজি বাজার পয়েন্টে জলকদরের উপর নির্মিত ব্রিজের বেশকয়েকটি পাটাতনে মরিচা ধরে ভেঙে পড়েছে। কোথাও কোথাও আবার বড় বড় ফুটো হতে দেখা গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের পাটাতন কয়েকবার মেরামত করা হলেও দীর্ঘ মেয়াদী সুফল পায়নি জনগণ। অতীব পাতলা পাটাতন বসিয়ে কোনো রকম দায়সাড়া জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করা হলেও বছর না যেতেই পুনরায় ভেঙে পড়ে ব্রিজের পাটাতন। দুর্ভোগ যেন লেগে আছে জনগুরুত্বপূর্ণ এ ব্রিজে। বর্তমানে ব্রিজের বেহাল দশায় যাতায়ত ব্যবস্থা ব্যাহত হয়ে। দ্রুতই ব্রিজের সংস্কার করা না হলে সংযোগ সড়ক দিয়ে ওই এলাকার প্রায় ১৩ গ্রামের হাজার হাজার মানুষের সাথে উপজেলার প্রধান সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। দুরদুরান্ত থেকে সৈকতে আসা পর্যটকদেরও ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে ব্রিজের বেহাল অবস্থা দেখে।’
উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, বাহারছড়া ইউনিয়নের ইলশা গ্রামের পশ্চিমে বাহারছড়া গ্রামের মাঝামাঝি বশির উল্লাহ মিয়াজী বাজারের একটু পশ্চিমে জলকদর খালের প্রায় ৯০ ফুট উপরে ২০১৬ সালে এ বেইলি ব্রিজটি নির্মিত হয়। নির্মাণের পর এই ব্রিজটি জনসাধারনের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলেও উদ্বোধনের কয়েক বছর পার না হতেই বছর অন্তর অন্তর ব্রিজের পাটাতন ভেঙ্গে যায়। তবে, এবার বড় বাজেটে ব্রিজটিটি সংস্কার করা হবে, যা দীর্ঘমেয়াদী স্থায়ী থাকবে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ‘বেইলি ব্রিজের কাজ নিম্নমানের হওয়ার কারণে সংস্কারের বছর না যেতেই বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ যাত্রীসহ যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়া ব্রিজে রাতের আঁধারে চলাচলের সময় ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে নিত্যদিন। কিন্তু আজ পর্যন্ত বেহাল দশার সংস্কার কাজের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।’
বশির উল্লাহ মিয়াজি বাজার বণিক সমিতির সহ সভাপতি ডা. শাহরিয়ার আব্দুল্লাহ পারভেজ জানান, ‘ব্যস্ততম ব্রিজটি উপজেলার উপকূলীয় বাহারছড়া, সরল খানখানাবাদ ইউনিয়ন সহ ডোংরা, ইলশা, চাপাছড়ি এলাকার জনসাধারণের মধ্যে যেমন সেতুবন্ধন তৈরী করেছে তেমনি বাহারছড়া ইউনিয়নের প্রায় ১৩ গ্রামের লোকজনের দৈনন্দিন কাজে চট্টগ্রাম শহর ও বাঁশখালী উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হয়েছে। বর্তমান ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন উপকূলীয় ডিগ্রী কলেজ, বাহারছরা রত্নপুর উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্ব বাহারছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঁশখালী আর্দশ শিশু নিকেতন, আইশা খাতুন শিশু নিকেতন, সোলতানিয়া এমদাদুল উলুম মাদরাসাসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে থাকে। যেখানে ছোট ছোট কোমলমতি শিশুরাও রয়েছে।’
ব্রিজে প্রতিদিন যাতায়তকারী স্থানীয় যানবাহন চালকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ‘বশির উল্লাহ মিয়াজি বাজার ব্রিজটির উপর দিয়ে দিন-রাত শতশত সিএনজি, অটোরিকশা, মিনিট্রাক, পিকআপ চলাচল করে থাকে। বাহারছড়া সাগর পাড়ে দর্শনার্থীদের আনাগোনা হয় এই ব্রিজের উপর দিয়ে। সম্প্রতি ব্রিজটির কয়েকটি পাটাতন ভেঙ্গে পড়ায় হুমকির মধ্যে পড়েছে যান চলাচল। এ মৃত্যুফাঁদসম ব্রিজে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে চলাচলরত জনসাধারনের মৃত্যুর আশংকাও করেছেন তারা।’
উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) কাজী ফাহাদ বিন মাহমুদ দৈনিক ভোরের দর্পণ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার বিষয়ে অবগত হয়েছি। ব্রিজের সংস্কারের জন্য ১৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর ইস্টিমিট পাঠানো হয়েছে। এবার অন্তত টেকসই সংস্কার হবে। আশা করছি অনুমোদন পেলেই আগামী এক মাসের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বশির উল্লাহ মিয়াজি বাজার সড়কের বেশকিছু অংশের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর বাকি অংশের কাজও শুরু হবে।