নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ নিয়ে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র ভিন্ন মত পোষণ করছে বেশ কিছু বিষয়ে। তাদের মধ্যে মতদ্বৈততা প্রকাশ্য রূপ নিতে শুরু করেছে। যেমনটি হয়েছিল ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে। তবে শেষপর্যন্ত সেই মতদ্বৈততা তারা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল। এখন এই মতদ্বৈততা কিভাবে কাটানো হবে তা দেখার বিষয়।
ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে অভিন্ন অবস্থানে নেই। নির্বাচনের আগেও তারা অভিন্ন অবস্থানে ছিল না। নির্বাচনের সময় ভারতের অনুরোধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক ধরনের নীরবতা পালন করেছিলেন। কিন্তু এখন আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নড়েচড়ে বসেছে। সবকিছু মিলিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতদ্বৈততা প্রকাশ্যে রূপ নিতে শুরু করেছে।’
ভারত মনে করে যে, বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয়েছে, সে নির্বাচন যথাযথ এবং সঠিক ভাবে হয়েছে। এখন এই নির্বাচন নিয়ে আর নতুন কিছু করার নেই। আগামী পাঁচ বছর পর নতুন নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে সকল পক্ষকে কাজ করতে হবে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেটি মনে করছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের নির্বাচন নিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। খুব শীঘ্রই এই চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলেও জানা গেছে। এই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য স্থায়ী একটি পদ্ধতির বিষয়ে মতামত প্রকাশ করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইতিবাচক আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এটি করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করবে বলেও বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে গেছে। এই সম্পর্কের লাগাম এখনই টেনে ধরা উচিত। কিন্তু ভারত মনে করে যে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক পুরোপুরি অর্থনৈতিক সম্পর্ক। এর মধ্যে রাজনীতির কোন বিষয় নেই। চীন এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে না এবং রাজনৈতিক বিষয়ে চীনের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চীনের আগ্রাসন মুক্তি চায়।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, বঙ্গোপসাগরে তেল গ্যাস উত্তোলনের জন্য বাংলাদেশ সরকার যে টেন্ডার দিয়েছে সেই টেন্ডারটি ত্রুটিপূর্ণ এবং এই টেন্ডারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও রাশিয়া, চীন এবং ভারত অংশগ্রহণ করছে। মার্কিন প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানগুলো এই টেন্ডারের যথাযথ হিস্যা পাবে না বলেই তারা ধারণা করছে। অন্যদিকে ভারত তাদেরকে বলেছে যে, এখানে তেল গ্যাস উত্তোলনে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন যৌক্তিক হিস্যা পায় সেই বিষয়টি তারা দেখবে। কিন্তু শুধু ভারতের ওপর তার আস্থা রাখতে পারছে না।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে অবস্থানের পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। নির্বাচনের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ আলোচনা শুরু করা। একটি রাজনৈতিক সংলাপ যেন দেশকে স্থিতিশীল করতে পারে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা কিন্তু ভারত মনে করে রাজনৈতিক সংলাপ একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আওয়ামী লীগ কার সাথে সংলাপ করবে বা বিএনপি কার সাথে সংলাপ করবে সেটি তাদের বিষয়। এই বিষয়ে বাইরের কোন হস্তক্ষেপ উচিত নয়। এই বিরোধ গুলো নিয়ে দু’দেশই আলোচনা করছে। তবে এই সমস্ত বিরোধকে কেউ এখন গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন না। কারণ নির্বাচন হয়ে গেছে। ভারতও সামনে তাদের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। কাজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি চায় বা কি প্রত্যাশা করে এগুলো তারা সবসময় বলে থাকবে। বাংলাদেশ এখন এ বিষয়গুলোকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে রাজি নয়।’