নিজস্ব প্রতিবেদক: চীন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক অংশীদার। বাংলাদেশে যে মেগা প্রকল্পগুলো এখন বাস্তবায়ন চলছে সেই মেগা প্রকল্পগুলোর একটি বড় অংশ জুড়েই রয়েছে চীনের উপস্থিতি এবং অংশগ্রহণ। চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের কথা সরকার অস্বীকার করছে না। বরং চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দিচ্ছে’।
কিন্তু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশকে ঘিরে চীনের একটি আগ্রাসী পরিকল্পনা রয়েছে। শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপ যে ভাবে চীন নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল ঠিক তেমনি ভাবে বাংলাদেশের ওপরও চীন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। একদিকে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল করা অন্যদিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা এবং পার্বত্য অঞ্চলকে অস্থির করা ইত্যাদি চতুর্মুখী পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে আঁটোসাঁটো করে চীনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক ক্ষমতাধর এই দেশটি। আর এ কারণেই বাংলাদেশকে ঘিরে চীনের আগ্রহ যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে আগ্রাসন।
বাংলাদেশকে নিয়ে চীনের মহাপরিকল্পনার চারটি বৈশিষ্ট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রথমত, বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে আরও চীনা নির্ভরশীল নির্ভর করে তোলা। বাংলাদেশে যেন টাকার থলি নিয়ে ঘুরছে চীন। ইতিমধ্যে চীন বলেছে, বাংলাদেশ যদি ঋণ খেলাপি হয় এবং নিয়মিত কিস্তি দিতে না পারে তাহলে পরে চীন আর্থিক সহায়তা দিতে রাজি আছে। বাংলাদেশকে এখন প্রচুর সুদ সহ ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। সামনের দুই বছর বাংলাদেশের জন্য ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে একটা কঠিন সময়। আর এরকম বাস্তবতাতে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়ছে। ডলার সংকট দেখা দিয়েছে তীব্র ভাবে। এরকম পরিস্থিতির মধ্যে যদি বাংলাদেশ ঋণ খেলাপি হয় এবং তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে সে ক্ষেত্রে হয়ত চীনের দ্বারস্থ হতে হবে তখনই চীন বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলে বন্দি করবে।
দ্বিতীয়ত, রাজনীতির ওপর চীনের প্রভাব। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও চীন প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে থেকেই চীন বলেছে যে, তারা বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে চায়। বাংলাদেশকে ঘিরে যে মার্কিন আগ্রহ এবং নির্বাচনের ব্যাপারে মার্কিন হস্তক্ষেপ তারও সমালোচনা করেছিল। কিন্তু ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে চীন শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপির সঙ্গেও গোপনে যোগাযোগ করছে। এমনকি স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী দলের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করছে। সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চীন বাংলাদেশে একটি আলাদা রাজনৈতিক প্রভাব বলয় সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তৃতীয়ত, পার্বত্য এলাকায় কেএনএফ-এর যে তৎপরতা সেই তৎপরতায় চীনের যোগসূত্র আছে বলে অনেকে মনে করছেন। যদিও এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু কেএনএফ-এর বিভিন্ন অস্ত্র এবং তাদের প্রশিক্ষণ সহ নানা তৎপরতায় চীনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাবের কথা অস্বীকার করা যাচ্ছে না।
চতুর্থত, চীন এখন বাংলাদেশের সঙ্গে যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দিচ্ছে তার মধ্যে বেশ কিছু ভারত বিরোধী প্রকল্প রয়েছে। তিস্তা ব্যারেজ-এর পাশে জলাধার নির্মাণের মতো প্রকল্প, সীমান্ত অঞ্চলে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের মতো প্রকল্পগুলো দিয়ে বাংলাদেশের মাধ্যমে ভারতকে চীন চাপে ফেলতে চাইছে। আর এই চতুর্মুখী আগ্রাসন মোকাবিলা করে বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে সেটাই হল এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।’