নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এখনো যুক্তরাষ্ট্র তার আনুষ্ঠানিক রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নির্বাচন পরবর্তী একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। সেই সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। ওই রিপোর্টিই বলা হয়েছে যে, মার্কিন নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল যখন পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিবে, তখন সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে তারা তাদের অবস্থান ব্যক্ত করবে।
জানা গেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটি প্রস্তুত প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসের যে কোনও সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হবে। এই প্রতিবেদনের পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের আনুষ্ঠানিক অবস্থান ব্যক্ত করবে। তবে একাধিক সূত্র বলছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হবে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ মনে করছে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ মনে করছে না, তেমনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা যেন অব্যাহত থাকে এবং মার্কিন স্বার্থ যেন বাংলাদেশে সংরক্ষিত থাকে, সেই বিষয়টি নিয়েও মনোযোগ দিবে।’
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, নির্বাচনের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো তুলে ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি গণতান্ত্রিক সমঝোতা এবং গণতান্ত্রিক সহনশীলতার উপর গুরুত্ব দিবে। রাজনৈতিক দলগুলো যেন একে অন্যের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে উদ্যোগ নেয় সেই সেই পরামর্শ দেবে। এই রিপোর্টের পর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ এ ব্যাপারে কী ধরনের ব্যবস্থা নেবে, তার একটা ধারণা পাওয়া যাবে।
প্রসঙ্গত যে, গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসাবে নির্বাচনের জন্য তাগিদ দেন এবং অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু, নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে কাউকে নিষেধাজ্ঞা দেবে কি দেবে না এটি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। তবে, তাৎক্ষণিকভাবে নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ার কারণে এই নিষেধাজ্ঞার গুরুত্ব যে অনেকটাই কমে যাচ্ছে, এ ব্যাপারে কূটনৈতিক মহল একমত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মনে করছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কিছু সতর্কবার্তা দিতে পারে এবং রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেন একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকে, সে ব্যাপারেও মার্কিন প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকবে। তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও বড় ধরনের বিরোধে জড়াতে চায় না বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক মহল। নির্বাচনের ত্রুটির বিষয়টি উপেক্ষা করেই তারা সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে যেতে চায়।
কূটনীতিকরা বলছেন যে, ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের প্রশ্ন ছিল। তারা তাদের প্রতিবেদনেও ২০১৮ সালে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি বলেছে প্রশ্ন তুলেছে। কিন্তু, তারপরও তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে গেছে। এবারও ঠিক একই রকম ঘটনা ঘটবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই আনুষ্ঠানিক রিপোর্টের পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকেন্দ্রীক যে অভিযাত্রা সেটি শেষ হবে। এই নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে অবস্থানই ব্যক্ত করুক না কেন, সেটিই হবে চূড়ান্ত।’