শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ বাঁশখালীতে অবৈধভাবে পাহাড়ি বালি-মাটি উত্তোলন ও জলকদর খালের বিভিন্নস্থান থেকে মাটি কেটে চড়া দামে বিক্রি চলছে নির্বিচারে। উপজেলা প্রশাসন এ অবৈধ বালি উত্তোলন ও মাটি কাটা বন্ধে বেশ কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা, স্ক্যাভেটর জব্দ ও কারাদন্ড দিলেও ভূমিদস্যুদের বেপরোয়া কিছুতেই দমাতে পারছে না। বিনা পুঁজিতে ভাল ব্যবসা নামে পরিচিত অবৈধ বালি উত্তোলন ও মাটি কেটে বিক্রিতে বাঁশখালীর কিশোর থেকে রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় রয়েছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসবে সরাসরি কখনো যুক্ত হয়ে আবার কখনো ভাগের অংশ পেয়ে চুপ থাকেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
পাহাড় সাবার, ছড়া থেকে বালি উত্তোলন, জমির টপসয়েল কাটার পাশাপাশি জলকদরের বুকেও সমানতালে চলছে ভূমিদস্যুদের দৌরাত্ম্য। উপজেলা প্রশাসন প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করলেও প্রভাবশালীদের সমন্বয়ে গঠিত শক্তিশালী সিন্ডিকেটের সঙ্গে কোনোভাবেই পেরে উঠছে না। একদিকে বন্ধ করলে আরেক দিকে শুরু হয় মাটি কাটার মহোৎসব। এভাবে চলতে থাকলে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, কেবল উপজেলা প্রশাসন নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব পর্যায়ের দায়িত্বরতরা এবং স্থানীয়ভাবে সচেতন মহল রুখে না দাঁড়ালে এ সিন্ডিকেট মোকাবিলা করা যাবে না। কেননা অবৈধভাবে লক্ষ লক্ষ টাকার বাণিজ্যের এ ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে বিভিন্ন দেন-দরবারের মাধ্যমে।
বাঁশখালীর ইকোনমিক জোন খ্যাত শীলকূপের জালিয়াখালী জলকদর খালটিও ভূমিদস্যুরা একদিকে স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করে নিচ্ছে। অন্যদিকে এ জলকদরের বুকে স্ক্যাভেটর বসিয়ে দেদারছে মাটি কাটছে। উপজেলার শিলকূপ ইউনিয়নের পশ্চিম মনকিচর ১ নম্বর ও ২নম্বর ওয়ার্ড সংলগ্ন জালিয়াখালী খালের একটি অংশ জুড়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট চক্রের নিয়ন্ত্রণে চলছে অবৈধভাবে খালের মাটি খনন ও বিক্রির কাজ। দীর্ঘদিন ধরে জালিয়াখালী জলকদর
খাল ধ্বংস করে অবৈধ ভাবে খাল খনন ও মাটি বিক্রির কাজ চলমান থাকলেও রহস্যজনক কারণে বন্ধ হয়নি ধ্বংসের মহোৎসব।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার শীলকূপ ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত পশ্চিম মনকিচর ২ নম্বর ওয়ার্ড সংলগ্ন শীলপাড়া ও আশা বাপের বাড়ি সংলগ্ন বিস্তৃত জলকদর খালের মাটি অবৈধভাবে খনন করে বিক্রির মহোৎসবে মেতে উঠছে স্থানীয় ভূমিদস্যু চক্র। এ সকল ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট চক্রের আয়োজনে স্ক্যাভেটর বসিয়ে রাতের আঁধারে মাটি কেটে ট্রাকে ট্রাকে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। কিশোর চাকলকদের বেপরোয়া গতিতে সড়কে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে পথচারী সহ স্থানীয়রা। এসব মাটি দিয়ে বসতভিটে ভরাট সহ ইট ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে। উল্লেখিত স্থানে দীর্ঘদিন যাবত মাটি খনন করার বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ছিদ্দিক আকবর বাহাদুর বলেন, ‘রাতের আঁধারে স্ক্যাভেটর বসিয়ে কিছু চিহ্নিত ভূমিদস্যুচক্র জলকদরের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তারা দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অপরদিকে প্রভাবশালীরা জলকদর দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে যাচ্ছে। এসব দেখার বিষয় পাউবো’র এবং উপজেলা প্রশাসনের। অবৈধভাবে সরকারী খাল খনন করে মাটি বিক্রি বন্ধ করে পরিবেশ বিপর্যয় রক্ষার্থে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কঠোর আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আকতার বলেন, অবৈধভাবে মাটি কাটা হলে সে যেই কেউ হউক না কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে উপজেলায় বেশ কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানের খবর পেলেই ভূমিদস্যুরা পালিয়ে যায়। অবৈধভাবে মাটি খেকোদের তালিকা প্রণয়ন করে তাদের বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।’ তিনি স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের এ ব্যাপারে সচেতন ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান।