শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জনগণকে পতিত জমিতে আবাদ করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিত্যক্ত জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষের অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু সালেক। বাঁশখালী উপজেলা কৃষি দপ্তর কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের নানা দিক নির্দেশনায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় কৃষিক্ষেত্রে এক মহাবিপ্লব সংঘটিত করে চলেছেন। ‘কোথাও থাকবে না একটুকু পতিত জমি’ সরকারের এমন নির্দেশনা বাস্তবায়নে, যে জমিতে যে ফসল উৎপাদন করা যায় এবং একই জমিতে একাধিক জাতের ফসল উৎপাদন করা যায় এমনই পরিকল্পনা ও নানা ধরণের কৃষি ও কৃষকবান্ধব সহযোগিতা নিয়ে বাঁশখালীতে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর। এবছর এ উপজেলায় প্রায় ৯০ হেক্টর অনাবাদি জমি কে আবাদি জমিতে পরিনত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, বাঁশখালী উপজেলাকে উত্তর-দক্ষিণ লম্বা প্রধান সড়কটি দু’ভাগে ভাগ করেছে। সড়কের পূর্বে পাহাড়ী ও সমতল ভূমি এবং পশ্চিমে উপকূলীয় সমতল ভূমি ও বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চল। ১৪টি ইউনিয়ন ১টি পৌরসভা নিয়ে বাঁশখালী উপজেলা গঠিত। এ জনপদের মানুষ জীবন যাত্রার জন্য সাগর-পাহাড় ও সমতল ভূমিকে নানাভাবে কাজে লাগিয়ে আসছে। এ জনপদের মাটি অনেক উর্বর। সাধারণ কৃষকদের পাশাপাশি দিনদিন কৃষি উদ্যোক্তাও বাড়ছে। উপজেলা কৃষি অফিস কৃষিকাজে নানা মুখি স্বপ্ন দেখায় মানুষকে। যে স্বপ্ন ইতোমধ্যে এ জনপদের জীবনে বাস্তব স্বপ্নে রূপ নিয়েছে। বাঁশখালী উপজেলা কৃষি দপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী কর্মকর্তাগণের নিরলস প্রচেষ্টায় আজ কর্মহীন মানুষের মাঝে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে এক সুন্দর জীবনে দাঁড় করিয়েছে। যাদের অনেকেই শিক্ষিত যুবক শ্রেণি।
গত বছরের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে উপকূলীয় গন্ডামারা ইউনিয়নের বালুময় বিস্তৃর্ণ এলাকা ভিজিট করে উপজেলা কৃষি দপ্তর। এ বিস্তৃর্ণ এলাকাকে নতুন উদ্যোক্তা স্থানীয় সোহেল এর মাধ্যমে বিভিন্ন ফসলে সবুজে রুপান্তর করার পরিকল্পনা করা হয়। উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বক্ষণিক তদারকির মাধ্যমে সম্প্রতি পরামর্শ অনুযায়ী এখানে চাষ করা হয়েছে চিনাবাদাম, ভুট্টা, সূর্যমুখী, তরমুজ, টমেটো, আলু, গাজর, মরিচ, লাউ জাতীয় ফসল। চিনাবাদাম, সূর্যমুখী, ভুট্টা, সরিষা বীজ সহয়তাও দেওয়া হয়েছে এখানে। পুরো এলাকাটাই আবাদী জমিতে পরিনত হচ্ছে। তাছাড়া বাঁশখালীতে উচ্চমূল্যের ফসল বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন টমেটো প্রায় ৩৫০ হেক্টর, কাঁকরোল ১২০০ হেক্টর, ফুলকপি ৮০ হেক্টর, ব্রোকলি ১৫ হেক্টর, শীম ৩৬০ হেক্টর, আগাম মুলা ৩৮০ হেক্টর, খিড়া ২৬০ হেক্টর, শশা ৩৬০ হেক্টর, লাউ ৪১০ হেক্টর, আলু ৫৫০ হেক্টর, কূল ১২ হেক্টর, মাল্টা ১৪০ হেক্টর, ড্রাগন ১০ হেক্টর, পেঁপে ১৫ হেক্টর উল্লেখযোগ্য।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এই বছরে উপকূলীয় এবং পাহাড়ী পাদদেশে প্রায় ৯০ হেক্টর অনাবাদি জমি কে আবাদি জমিতে পরিনত করা হয়েছে এবং উচ্চমূল্যের ফসল চাষের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নসাধন করা হয়েছে। পাহাড়ের অনাবাদি জমিতে উচ্চমূল্য ফসল কূল (বরই), মাল্টা, ড্রাগন ফলের বাগান সৃজন হয়েছে। উপকূলীয় বিশাল অংশে বিশেষ করে গন্ডামারা, সরল, কাথরিয়া, ছনুয়ার কিছু অংশ গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে অভাবনীয়ভাবে। এখানে নতুন কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগে ফলন ও আবাদী অঞ্চল দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে মালচিং পেপারের ব্যবহার করছে কৃষক, তাতে গড়া পোঁচা রোগের হাত থেকে টমেটো ক্ষতিগ্রস্ত কম হচ্ছে ফলে ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিনদিন এই প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়ছে টমেটো চাষে। এছাড়াও উপকূলীয় বাহারছড়া, কাথরিয়া, সাধনপুর ইউনিয়নে প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে শশা, খিরা, আগাম তরমুজ ও বাংগির চাষ হচ্ছে। ফলে বাঁশখালী কৃষি অফিসের পরামর্শে উচ্চমূল্যের, আগাম ফসল চাষ করে কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নয়নসাধন হচ্ছে ব্যাপকভাবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আবু সালেক জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ‘প্রতি ইঞ্চি জায়গা কে চাষের আওতায় নিয়ে আসতে হবে’ এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমি কাজ করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসন যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। পরিকল্পনা মাফিক অনাবাদি জায়গা চাষের আওতায় আনা হচ্ছে এবং উচ্চমূল্যের ফসল চাষ বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নয়নসাধন সাধনের চেষ্টা করা হচ্ছে।