নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের বাংলাদেশে প্রায় সব সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। অনেকগুলো সম্পদে প্রশাসকও নিযুক্ত করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন চলতি সপ্তাহের কোন এক সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী এবং কন্যাদের নামে মামলা করবে বলেও একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।
বেনজীর আহমেদের তদন্ত শেষ পর্যায়ে। যে কোনো সময় তদন্ত রিপোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে উপস্থাপিত হবে এবং কমিশনের বৈঠকে একটি অনুমোদিত হলে মামলা দায়ের করা হবে। তবে এসব মামলা, সম্পত্তি ক্রোক নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নন সাবেক পুলিশ প্রধান। বর্তমানে তিনি তুরস্কে অবস্থান করছেন, এ সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। সেখানে তার একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার বড় মেয়ের জামাই তুরস্কের এই ব্যবসাগুলো পরিচালনা করত। এখন বেনজীর আহমেদও সেখানে যুক্ত হয়েছেন। তুরস্কে তাদের শতকোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলেও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে’।
আর এ কারণেই বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশে তার সম্পদ কতটা বাজেয়াপ্ত হল বা বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ায় কী হল সে সম্পর্কে আগ্রহী নন, উদ্বিগ্নও নন। তবে বাংলাদেশে বেনজীর তার বিভিন্ন ব্যবসায়িক পার্টনার এবং বিভিন্ন সময়ে তার সঙ্গে যাদের ঘনিষ্ঠতা ছিল, তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি তার ব্যাপারে যে অনুসন্ধান এবং তদন্তগুলো চলছে, তার খোজ খবরও নিচ্ছেন।
বেনজীর আহমেদ এখন আনুষ্ঠানিকভাবে তুরস্কের নাগরিক। ২০২১ সালে তিনি তুরস্কের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। ২০২২ এবং ২৩ সালে তুরস্কে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হন বলে জানা গেছে। তুরস্কে একটি আবাসিক হোটেলে বেনজীর আহমেদ এবং তার পরিবারের বিপুল পরিমাণ শেয়ার রয়েছে। এছাড়াও তুরস্কে একটি বিপণি বিতানের মালিক বেনজীর আহমেদ বলেও জানা গেছে। তাছাড়াও সেখানে আরও কিছু ব্যবসার সঙ্গে তিনি যুক্ত।
শুধু তুরস্ক নয়, পর্তুগালেরও পাসপোর্ট আছে বেনজীর আহমেদের এবং পর্তুগালের পাসপোর্ট তিনি নিয়েছেন তার পুরো পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেখানেও বেনজীরের বেশ কিছু ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে বলে জানা গেছে।
বেনজীর আহমেদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তিনি, তার স্ত্রী এবং দুই কন্যা তুরস্কে অবস্থান করছেন। তার একটি কন্যা এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করছেন। আর তার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে।’
যেহেতু বেনজীর আহমেদ এখন আনুষ্ঠানিকভাবে তুরস্কের নাগরিক এবং তুরস্কের পাসপোর্ট তিনি পেয়েছেন, কাজেই তার এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। এ সব নিয়ে বেনজীর আহমেদের মনে কোনো উদ্বেগও নেই বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, বেনজীর আহমেদের তুরস্ক, পর্তুগাল ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে বেনজীরের যে সম্পদ জব্দ করা হয়েছে তার চেয়ে অন্তত ১০ গুণ সম্পদ তার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। কাজেই দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে আপাতত উদ্বিগ্ন নন বেনজীর আহমেদ।
তবে আইনজীবীরা বলছেন, যদি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় এবং ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট যদি আদায় করা যায় সেক্ষেত্রে বেনজীর আহমেদ যে দেশের পাসপোর্টেই থাকুক না কেন, তাকে চাপে ফেলা সম্ভব হবে। এখন দেখার বিষয় যে, বেনজীর আহমেদের তদন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।’