
ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যে অঙ্গীকার করেছিল-‘মেগা প্রকল্প নয়, জনগুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রকল্পই হবে অগ্রাধিকার’-তা বাস্তবতার আলোকে ধীরে ধীরে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর একনেকের প্রথম সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণার পর পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদসহ সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও এ অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। চট্টগ্রামের বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রকল্প (১৩,৫২৫ কোটি টাকা), ভোলা-বরিশাল সেতু (১৭,৪৬৬ কোটি টাকা), কালুরঘাট রেল কাম রোড সেতু, মোংলা বন্দর সম্প্রসারণ, এবং চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্প-সবগুলোই বৃহৎ পরিসরের এবং উল্লেখযোগ্য ব্যয়ের মেগা প্রকল্প।
এই অবস্থার মধ্যেই উঠে আসছে আরও গুরুতর প্রশ্ন-পূর্ববর্তী সরকারের বিরুদ্ধে মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ অপচয় ও লুটপাটের যে অভিযোগ অন্তর্বর্তী সরকার নিজের শ্বেতপত্রে তুলেছে, সেই অভিজ্ঞতা থেকে কী শিক্ষা নেয়া হলো? শ্বেতপত্র অনুযায়ী, গত সরকারের আমলে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার মতো অপচয় হয়েছে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে। তাহলে একই ধরনের বিন্যাসে নতুন মেগা প্রকল্প নেওয়া কতটা যৌক্তিক?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান সরকার যেসব প্রকল্প হাতে নিচ্ছে, সেগুলোর প্রাক-মূল্যায়ন, কারিগরি সক্ষমতা ও অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা সম্পর্কে স্বচ্ছতা নেই। যেমন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন তুলেছেন, “এই সরকার যেহেতু প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের আগেই বিদায় নেবে, তবে এখন কেন এই প্রকল্পগুলো নেওয়া হচ্ছে?”
অন্যদিকে, সরকারের যুক্তি হলো-এগুলো দূরদর্শী প্রকল্প, এবং কিছু বিদেশি বিনিয়োগ (যেমন জাপানি বা কোরিয়ান অংশীদারিত্ব) এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবু প্রশ্ন থেকে যায়-এই পরিকল্পনাগুলোর অর্থনৈতিক চাপ এবং ঋণভার ভবিষ্যৎ সরকার ও জনগণের কাঁধে কতটা চেপে বসবে?
সবশেষে, এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ‘মেগা প্রকল্প না নেওয়ার’ ঘোষণাটি কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একদিকে যেমন আগের সরকারে অনিয়মের পুনরাবৃত্তি হতে পারে, অন্যদিকে এমন সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতিকে আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে।