
নিজস্ব প্রতিবেদক: একের পর এক সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কেচ্ছা কাহিনী সরকারকে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। বিভিন্ন কর্মকর্তার সীমাহীন বেপরোয়া, দুর্নীতি সরকারের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা লাগামহীন দুর্নীতি করেছেন, বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন। তাদের এই অবৈধ কর্মকাণ্ড সরকারের ওপর এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এটি সরকারের নীতি নির্ধারক মহলও অনুভব করছে। আর এই কারণেই প্রশাসনের এই দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার জন্য কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা হবে। কারা অবৈধভাবে সম্পদ বানিয়েছে, কারা বেপরোয়া ভাবে দুর্নীতি করছে সে ব্যাপারে সব তথ্য উদ্ধার করা হবে এবং পুরো প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি ঘোষণা করেছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছে এর আগে থেকে। ২০১৮ সালে নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক বৈঠক করেন। তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন যে, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা বাড়ানো, এখন আর দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই সতর্কবার্তাকে আমলে নেননি অনেক সরকারি কর্মকর্তারা। তারা তাদের আখের গোছানোর জন্য অবৈধ পন্থাকে বেছে নিয়েছেন। একের পর এক তাদের দুর্নীতি বিবরণ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ, এনবিআরের কর্মকর্তা মতিউর রহমানের দুর্নীতি সকলকে হতবাক করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার প্রশাসনে কারা দুর্নীতি করছে এবং কীভাবে দুর্নীতি করছে সে ব্যাপারে একটি স্বচ্ছ এবং নির্মোহ তদন্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, দু বছর আগে সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের আয়ের বিবরণ প্রকাশ করতে হবে। তাদের সম্পদের বিবরণ প্রতি বছর দাখিল করতে হবে। কিন্তু দুই বছরেও এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি। আমলাদের মধ্যে এক ধরনের অনীহার কারণে শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি।’
উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী কর্মকর্তা চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী প্রতিবছর সম্পদের বিবরণ দাখিল করা সরকারি কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের জন্য বাধ্যতামূলক। কিন্তু এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। সরকার এখন এটি কঠোরভাবে মানার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলে জানা গেছে। তাছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের অতীত রেকর্ড, তাদের সম্পদ এবং আয়-ব্যয়ের উৎস সম্পর্কে তথ্য যাচাই বাছাই করা হবে। বিভিন্ন দায়িত্বশীল সংস্থাকে এ ব্যাপারে কঠোর নিদের্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রশাসনে যদি সততা এবং ন্যায় নিষ্ঠা না থাকে তাহলে সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হবে, সরকারের ইমেজ নষ্ট হবে। এখন অনেকেই মনে করছেন সরকারের ছত্রছায়ায় থেকেই এবার বেপরোয়া, দুর্নীতিবাজ হয়ে উঠেছেন। তবে বিভিন্ন মহল মনে করছেন যে, এরা আসলে ছত্রছায়া এসেছেন দুর্নীতি করার জন্যই। হঠাৎ বনে যাওয়া এই সমস্ত অতি ভক্তদের কারণেই সরকারে বদনাম হচ্ছে। এরাই সরকারের কাছে মানুষ সেঁজে নানা রকম অনিয়ম এবং দুর্নীতি করছে। আর এ কারণেই প্রশাসনে নতুন করে শুরু হচ্ছে শুদ্ধি অভিযান।’