নিজস্ব প্রতিবেদক: শরীয়তপুর পৌরসভার দাসার্ত্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোবিন্দ চন্দ্র দত্তের বিরুদ্ধে স্কুল ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা জানাজানির পর থেকেই এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন অভিযুক্ত এই প্রধান শিক্ষক। তবে ঘটনার স্বীকার ওই শিক্ষার্থী ও তার পরিবারকে অদৃশ্য চাপে ফেলে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে তার নির্যাতনের ভয়ে স্কুলটিতেও কমতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। গত এক বছরে বেশ কিছু শিক্ষার্থীরা তার লালসার শিকার হয়েছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। যদিও লিখিত অভিযোগের অজুহাতে জড়িত ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা হয়নি জানালেও তার সম্পর্কে নারী কেলেঙ্কারি সহ স্পর্শকাতর নানান মৌখিক অভিযোগে বিরক্ত ক্ষোদ শিক্ষা কর্মকর্তারা। তবে জেলা পুলিশ সুপার বলছেন, এমন ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেলেই নেওয়া হবে যথাযথ ব্যবস্থা।
একাধিক শিক্ষক ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরে সদর উপজেলার তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ঘুরেফিরে চাকরি করেছেন গোবিন্দ চন্দ্র দত্ত। সদর উপজেলার ৭৭ নং দাসার্ত্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৮ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চলতি দায়িত্বে নিয়োগ পান তিনি। চাকুরী জীবনে যেখানেই শিক্ষকতা করেছেন সেখানেই উঠেছে তার বিরুদ্ধে একাধিক নারী কেলেঙ্কারি সহ নানান গুরুতর অভিযোগ। বেশিরভাগ অভিযোগেই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ঘটিত হওয়ায় মুখ খুলতে চাইনি অভিভাবকরা। এর জন্যই স্পর্শকাতর এত সব অভিযোগের পরেও অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়ে গেছেন এই প্রধান শিক্ষক।
কিন্তু এবার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের আরেক প্রাক্তন ছাত্রীকে প্রাইভেট পাড়ানোর আড়ালে দীর্ঘদিন যৌন নির্যাতনের। কিছু দিন আগে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তার এ নির্যাতনের ঘটনাটি আবারও সামনে এসেছে। কয়েক দফায় দেন দরবারেও বসিয়ে মিমাংসা করেছেন স্থানীয় মাতব্বররা। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে আবারও অপকর্ম ঢাকতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এ প্রধান শিক্ষক। নির্যাতনের শিকার মেয়েটির বাবা না থাকায় তার নানির কাছে বড় হয়েছেন। ১২ বছরের ওই কিশোরীর নানী জানান, আমি ছোট থেকেই নাতিনকে বড় করেছি। ওর মা ঢাকাতে গার্মেন্টসে চাকরি করেন আমার ঘরের সবাই প্রতিবন্ধী আমার নাতিন গোবিন্দ মাস্টারের কাছে প্রাইভেট পড়তেন গোবিন্দ মাস্টার আমার বাড়িতেও আসতেন ঘটনার পর থেকে আমার মেয়ে নাতিনকে ঢাকা নিয়ে গেছে এখন আমি আর কিছু বলতে পারব না আল্লাহ বিচার করবে আমি কিছু জানি না। বর্তমানে ওই কিশোরীর পরিবার ভয়ে আতঙ্কে রয়েছেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
দাসার্ত্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা রোকসানা আক্তার বলেন, পঞ্চম শ্রেণীতে আমাদের বিদ্যালয়ের বর্তমানে ২৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। আগের বছর ৩৭ জন শিক্ষার্থী ছিল এবার ১৪ জন কমছে। প্রধান শিক্ষক সম্পর্কে জানতে চাইলে এই শিক্ষিকা বলেন গোবিন্দ স্যার ফেব্রুয়ারীর এক তারিখ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত ডেপুটিশনে ছিলেন। ৭ ও ৮ তারিখ স্কুলে স্বাক্ষর করেছেন। ৯ তারিখ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত ডেপুটেশন দেখিয়ে স্বাক্ষর করে গেছেন। এ সময় যৌন হয়রানির শিকার পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর ব্যাপারে জানতে চাইলে এই শিক্ষিকা হেসে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে বলেন, গোবিন্দ স্যার শুনেছি প্রাইভেট পড়াতেন আর স্কুলের বাহিরে কি করে সেটা তো আমরা জানি না দেখিও না। গোবিন্দ চন্দ্র দত্তের নির্যাতনের শিকার একাধিক ছাত্রী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লোকও লজ্জার ভয়ে ও সামাজিক চাপে তার এমন অপকর্মের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াতে পারিনি। গোবিন্দ স্যার বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় রাজনীতির সাথে জড়িত। তাই স্থানীয় একটা প্রভাব রয়েছে তাদের দেশের অনেক ঘটনারই বিচার হয় না, তাই মুখ খুলে বিচার পাবো এমন নিশ্চয়তা নেই। তাই মান সম্মান বাঁচাতে বাচ্চাকে অন্য স্কুল ভর্তি করে দিয়েছি। তবে গোবিন্দ স্যারের একটা বিচার হওয়া উচিত।
যদিও এলাকাবাসী তোপের মুখে গত দুই সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন অযুহাতে গাঁ ঢাকা দিয়ে রয়েছেন গোবিন্দ চন্দ্র দত্ত। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে ছুটি না পেয়ে চাকরি বাঁচাতে অনুপস্থিত প্রধান শিক্ষক হাজিরা খাতায় আগামী ১৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডেপুটেশনের নামে সাক্ষার করে গেছেন। শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে গোবিন্দ চন্দ্র দত্ত বলেন, আমি একটা ট্রেনিংয়ে ঢাকা যাচ্ছি, আমি কিছু বলতে পারিনা জানিনা যারা অভিযোগ করেছে মিথ্যা। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাইজুল ইসলাম বলেন, দাসার্ত্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোবিন্দ চন্দ্র দত্তের বিরুদ্ধে আমার কাছে একটি অভিযোগ আসে। তিনি তার স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির এক বাচ্চাকে যৌন নির্যাতন করছেন। সেই বাচ্চাটি এখন পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। ওই বাচ্চাটি প্রাইমারি স্কুলে থাকা অবস্থায় অভিযোগটি করেনি কিন্তু এখন সে তার স্কুলের শিক্ষক ও পরিবারের কাছে যৌন নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগ করেছে। ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আমাকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছে। কিন্তু মৌখিক অভিযোগে আমরা কোন শাস্তি দিতে পারি না তাকে শাস্তির আওয়াতায় আনতে সাক্ষ্য প্রমাণ প্রয়োজন। এই বিষয়ে তার বিরুদ্ধে শাস্তি চেয়ে তার অভিভাবক বা এলাকার কোন মুরব্বি আমার কাছে অথবা উদ্দতন কতৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা তার বিরুদ্ধে খতিয়ে স্বত্যতা পেলে বিভাগীয় ব্যাবস্থা নিব। ম্যানেজিং কমিটি আমাকে জানিয়েছে তারা লিখিত অভিযোগ দিবে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন লিখত অভিযোগ না পাওয়ায় আমরা কোন ব্যাবস্থা নিতে পারছি না।
এর আগেও আমি যখন দায়িত্বে ছিলাম না তখনো তার বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ এসেছিল। সেটা তখন প্রমাণ হয় নাই এই কারণে হয়তো তার শাস্তি হয় নাই।তবে লোকজন ইদানিং তার বিরুদ্ধে বলাবলি করছে সে যেই স্কুলে যান তার মধ্যে এমন অভিযোগ আসে। ছাত্রী যৌন হয়রানীর বিষয়ে অভিভাবক এবং ম্যানেজিং কমিটির কাছে যে মৌখিক অভিযোগটি পেয়েছি এখন মনে হচ্ছে সেই অভিযোগটি তারা গোপন করার চেষ্টা করছে’। কিন্তু আমি কোন লিখিত অভিযোগ ছাড়া চাইলেও কোন ব্যবস্থা নিতে পারছি না। প্রধান শিক্ষক গোবিন্দ চন্দ্র দত্ত কোনো ডেপুটেশনে আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে জাজিরা উপজেলা স্কাউটের ট্রেনিং করার জন্য ১ থেকে ৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ডেপুটেশন নিয়েছিলেন।কিন্তু এখন সে আবার গাজীপুরে স্কাউটের ট্রেনিংয়ের জন্য ৭ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারী ডেপুটেশন চেয়েছিলেন । কিন্তু তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগের কারণে তার ডেপুটেশন বাতিল করেছি । তাকে আমি বলেছি আপনার বিরুদ্ধে নির্যাতনের যে অভিযোগ তাতে আপনাকে আমি চরিত্রহীন শিক্ষক হিসেবে মনে করি। আপনি যেই স্কুলের চাকরি করেন সেখানেই আপনার বিরুদ্ধে মেয়ে কেলেঙ্কারির অভিযোগ আসে অতএব আপনাকে আমি সন্দেহ করি। যদি প্রমাণ হয় আপনার শাস্তি হবে। শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম বলেন, এমন ঘটনায় কেউ কখনো অভিযোগ করেনি। যদি কোন ভুক্তভোগী পরিবার আমাদের কাছে রিপোর্ট করে। তাহলে লিগ্যাল যে অ্যাকশন আছে তা হবে। ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি আরও বলেন, যদি যৌন নির্যাতন হয়ে থাকে এবং সেটা যদি মাইনর হয়ে থাকে রেপ এর ঘটনা যদি ঘটে আর এগুলো যদি কেউ অভিযোগ না আনে পুলিশ যদি এগিয়ে গিয়ে অভিযোগ আনে তাহলে বিষয়টি যাবে পুলিশের বিরুদ্ধে তাই আমি বলব অভিযোগকারী যেন লিখিত অভিযোগ করে তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’