নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে গত ১১ জানুয়ারি। আজ নতুন মন্ত্রিসভা এক মাস পার করল। নতুন মন্ত্রিসভার যে সমস্ত সদস্যরা প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হয়েছেন বা যাদের দপ্তর পরিবর্তন হয়েছে তারা সম্ভবনা জাগাচ্ছেন। পুরনো মন্ত্রীদের যারা একই দপ্তরে আছেন তাদের চেয়ে আলোচনায় আছেন নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা। কিছু কিছু মন্ত্রীরা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছেন এবং তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আগ্রহ এবং আস্থা তৈরি হচ্ছে।
নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে একটি বিষয় অভিন্নভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা প্রত্যেকেই সংযত। অন্যান্য বারের মন্ত্রিসভায় যে রকম দেখা গেছে যে, দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই লাগামহীন কথাবার্তা বলা এবং অবিশ্বাস্য সব আশ্বাস দিয়ে মানুষকে আশান্বিত করা, তেমন প্রবণতা নেই মন্ত্রিসভার সদস্যদের।
দ্বিতীয়ত, মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্যকে দেখা যাচ্ছে উদ্যমী। তারা মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে নিয়মিত অফিস করছেন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগদান করছেন। তাদের মধ্যে এক ধরনের উদ্যম লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আরেকটি বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে যে, এখন পর্যন্ত নতুন মন্ত্রিসভার সকল সদস্য পরিচ্ছন্ন ইমেজ ধরে রেখেছেন। যদিও এক মাস সময় অত্যন্ত স্বল্প। কিন্তু এই এক মাসেই একজন মন্ত্রীর কার্যক্রমের একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায় এবং সেই ইঙ্গিতটি এখন পর্যন্ত ইতিবাচক।
মন্ত্রিসভায় যাদের দপ্তর পরিবর্তন হয়েছে তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ অন্যতম। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। এই মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন সফরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার ক্ষেত্রে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষত, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।’
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে যে কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলার কথা এবং কথাবার্তায় সংযত ভাব দেখানোর দায়িত্ব, সেটি তিনি চমৎকার ভাবে পালন করছেন। আগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তুলনায় তার এই বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে।
মন্ত্রিসভায় নতুন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের মতো স্পর্শকাতর মন্ত্রণালয় মোহাম্মদ আলী আরাফাত। তিনিও মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে অত্যন্ত সংযত বিনয়ী হিসেবে কাজ করছেন এবং গণমাধ্যমের মূল সঙ্কটটাকে তিনি চিহ্নিত করতে পেরেছেন অল্প সময়ের মধ্যে। অপতথ্য এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দুটি পৃথক জিনিস এই বিষয়টি তুলে ধরার ক্ষেত্রে তিনি একই উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলে সাধারণ মানুষ মনে করে।
মন্ত্রিসভায় প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান। দায়িত্ব গ্রহণ করেই তিনি প্রাণিসম্পদ খাতকে গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন এবং স্বল্প সময়ে যে কর্মকাণ্ডগুলো করছেন তাতে এই মন্ত্রণালয়টি আরও পাদপ্রদীপে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রথমবারের মতো প্রাণিসম্পদ মেলায় প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তিনি। চলতি মাসের যেকোনো সময়েই প্রাণিসম্পদ মেলা অনুষ্ঠিত হতে পারে। এছাড়াও আসন্ন রমজানে মাছ ডিম, মাছ, মাংস, ডিম, দুধের দাম নাগালের মধ্যে রাখার জন্য তিনি ন্যায্যমূল্যে ভ্রাম্যমান বিপণন ব্যবস্থার প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছেন।
জাহাঙ্গীর কবির নানক এর আগে ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী। এবার তিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। মাঝখানে তার পাঁচ বছরের বিরতি ছিল। নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি নিয়মিত অফিস করছেন। টাঙ্গাইলের শাড়ি যখন ভারত তার নিজস্ব বলে দাবি করেছে। তারপর যেভাবে তিনি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হচ্ছে।
নতুন অর্থমন্ত্রীর সবচেয়ে বড় গুণ হল তিনি নিয়মিত অফিস করছেন, অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে সমাধানের উপায় উদ্ভাবন করেছেন। বিশেষ করে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের জন্য তার উদ্যোগ এখন পর্যন্ত প্রশংসনীয়। নতুন মন্ত্রী হয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী৷ তার তৎপরতা এবং আন্তরিকভাবে যে তিনি সমস্যা সমাধান চান তা স্পষ্ট করেছেন। বেফাঁস কথা না বলে তরুণ এই প্রতিমন্ত্রী একটি শিষ্ঠাচার সুলভ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
শিক্ষায় উপমন্ত্রী থেকে প্রতিমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীও দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। সংবেদনশীল এবং স্পর্শকাতর বিতর্কিত বিষয়গুলোতে তিনি পরিপক্কতার সাথে মন্তব্য করে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়ে প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হয়ে সামন্ত লাল সুনির্দিষ্টভাবে কিছু দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বিশেষ করে অবৈধ ক্লিনিক এবং হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে তার অভিযান সকল মানুষের কাছে প্রশংসনীয় হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে একজন সৎ মানুষ হওয়ার কারণে তিনি এই কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে পেরেছেন বলেও অনেকে মনে করেন।’
এছাড়াও মন্ত্রিপরিষদের যারা নতুন সদস্য তারা কমবেশি সকলেই একটি কর্মতৎপরতার মনোভাব দেখাতে চেষ্টা করছেন। সবচেয়ে বড় হলো তারা মুখের লাগাম টেনে ধরতে পেরেছেন। এটি-ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’