আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পৃথিবীতে দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সৌরঝড়ের আলোর ঝলকানি দেখল বিশ্ব। উত্তর ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার মানুষ শুক্রবার রাতে এই সৌরঝড়ের ফলে সৃষ্ট মেরুজ্যোতি দেখতে পেয়েছেন। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে এই আলোক ঝলকানির ছবি শেয়ার করেছেন। তাতে দেখা গেছে, সমগ্র আকাশ বিভিন্ন রঙে ছেয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর কারণে স্যাটেলাইট ও বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জার্মানভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশ ওয়েদার প্রেডিকশন সেন্টার জানিয়েছে, সূর্য যখন প্রচুর পরিমাণ শক্তি উগরে দেয় বা নির্গত করে ঠিক সেই সময় এই রকম ভূচৌম্বকীয় ঝড়ের সৃষ্টি হয়। শুক্রবার বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী রাত ১০টার দিকে কোরোনাল মাস ইনজেকশন পৃথিবীতে আঘাত হানে। সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল থেকে চুম্বকীয় প্লাজমার বড় অগ্ন্যুৎপাত এটি। পরে এটি জিওম্যাগনেটিক স্টর্মে পরিণত হয়।
এদিকে এই সৌরঝড়ের কারণে উত্তর ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়াতে অরোরা আলোর ঝলকানি বা মেরুজ্যোতি দেখা গেছে’।
এই সৌরঝড়ের দেখার পর স্যাটেলাইট অপারেটর, এয়ারলাইনস এবং পাওয়ার গ্রিডকে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সম্ভাব্য ব্যাঘাতের জন্য সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার রিপোর্ট অনুযায়ী, সূর্য তার ১১ বছরের দীর্ঘ সৌরচক্র অতিক্রম করছে। এই কারণে, করোনাল ম্যাস ইনজেকশন এবং সূর্যের মধ্যে সোলার ফ্লেয়ার ঘটছে, যা ২০২৫ সাল পর্যন্ত চলতে থাকবে। সেপ্টেম্বর ২০১৭-এর পর এখন পর্যন্ত সূর্যের মধ্যে সবচেয়ে বড় সৌরশিখা দেখা গেছে।
সৌরঝড়ের কারণে স্যাটেলাইটে শর্ট সার্কিট হয়। পাওয়ার গ্রিড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব কারণে মহাকাশচারীদের জীবনও হুমকির মুখে পড়তে পারে। এতে পৃথিবীর ম্যাগনেটোস্ফিয়ারের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ঘটিয়ে বিঘ্ন ঘটাতে পারে বিদ্যুৎ পরিষেবাসহ কৃত্রিম উপগ্রহের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থাতেও।
ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের সঙ্গে যুক্ত চৌম্বকীয় ক্ষেত্র ওঠানামা করে দীর্ঘ তারে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করে, যার ফলে ব্ল্যাকআউট হতে পারে। দীর্ঘ পাইপলাইনগুলো বিদ্যুতায়িত হতে পারে, যা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। মহাকাশযানও উচ্চমাত্রার বিকিরণের ঝুঁকিতে রয়েছে, যদিও বায়ুমণ্ডল সৌরঝড়কে পৃথিবীতে পৌঁছতে বাধা দেয়।
নাসার কয়েকজন কর্মী জানিয়েছেন, তারা মহাকাশচারীর নিরাপত্তার দিকে নজর রাখছেন এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকা মহাকাশচারীদের স্টেশনের মধ্যে সব থেকে বেশি সুরক্ষিত জায়গায় অবস্থান করতে বলা হয়েছে।’