নিজস্ব প্রতিবেদক: পাহাড়ের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আবির্ভাব হয়েছিল। এক সময় সন্তু লারমার নেতৃত্বে শান্তিবাহিনী পাহাড়ে সন্ত্রাস এবং নানা রকম নাশকতার কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় এসেছ কেএনএফ। কেএনএফ কারা এবং কাদের মদদে এই সশস্ত্র সংগঠনটি চলে এ নিয়ে এখন চলছে নানারকম আলোচনা। বিশেষ করে পাহাড়ের সম্প্রতি ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে ৩টি ব্যাংক লুটের ঘটনার পর কেএনএফ আলোচনায় এসেছে এবং এই জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা নিয়েও মানুষের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ এবং আস্থা তৈরিতে সহায়তা দিয়ে গত বছর আলোচনায় এসেছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট। এরপর দুর্গম পাহাড়ে গভীর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদেরকে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে শান্তি আলোচনা শুরু করে। এর মধ্যেই একেবারে হঠাৎ রাতের অন্ধকারে বান্দরবানের রুমা শহরের একটি ব্যাংকে হানা দিয়ে ম্যানেজারকে অপহরণ এবং আনসারদের লুট করে ত্রাস সরিয়ে দেয়। এখানেই কুকি চিন থেমে থাকেনি। পরদিনই তারা থানচি উপজেলার দুটি ব্যাংকে হানা দিয়ে রীতিমত লুণ্ঠন করে। আর এই সংগঠনটি বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির মদদদাতা বলেই একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এটি একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এবং এই সংগঠনটির বিরুদ্ধে সরকারের শক্ত অবস্থান গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা আছে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।
গত বছর ধারাবাহিকভাবে বান্দরবানে কুকি চিন বিরোধী অভিযান শুরু করেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং এই বাহিনীর প্রধান কারণ ছিল যে, দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় জঙ্গিদেরকে তারা প্রশিক্ষণ দিত এবং অস্ত্র সহায়তা দিত। এটার বিনিময়ে জঙ্গিদের কাছ থেকে তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ পেত বলেও অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু কুকি চিনের আসল মদদদাতা কারা এই নিয়েই বিভিন্ন রকম কথাবার্তা রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে কেএনএফ ও এর সামরিক শাখা কুকি চিন আর্মি। কেএনএফ তৎপরতা শুরু হয় ২০২২ সালে। পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি অংশ মিয়ানমার, চীন ও কোচিন রাজ্য। ভারতের মিজোরাম মণিপুর রাজ্য সীমান্ত ঘেঁষে তাদের তৎপরতা বেশি। তবে কেএনএফের লোগোতে প্রতিষ্ঠাকাল বলা হয়েছে ২০০৮ সাল। তারা প্রকাশ্যে আসে ২০১৮ সালে। এই সংগঠনটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে চালিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে এর আসল লক্ষ্য হল একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা চালানো এবং তাদের এই সংগঠনটি পার্বত্য অঞ্চলে প্রায় অর্ধেক আয়তন অঞ্চল নিয়ে বেআইনি এবং মনগড়া মানচিত্র করেছে। তাদের এই মানচিত্রের তিন পাশে রয়েছে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতের সীমান্ত। এদের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। তারা সংগঠনটির কর্মকাণ্ড পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভারতের সঙ্গেও আলোচনা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।
মাস দুয়েক আগে বিজিবির মহাপরিচালক ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে সংগঠনটির একাধিক সদস্যের ভারতের মিজোরাম রাজ্যের পাহাড়ে আস্তানা গড়ে তোলার বিষয়টিও জানতে পেরেছে বিজিবি।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, এই কুকি চিনের সঙ্গে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একটি সম্পর্ক রয়েছে এবং বাংলাদেশ রাখাইন নিয়ে আলাদা একটি রাষ্ট্র করার যে মহাপরিকল্পনা সেই মহাপরিকল্পনার সঙ্গে এই কুকি চিনের সম্পর্ক রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।