আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, আজ ৮ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে দেশের প্রধান নির্বাহী হিসেবে আবারও ফিরে আসতে পারেন তিনবার ক্ষমতাচ্যুত পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। আর এই অনুমান সঠিক হলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে নওয়াজের এটি হবে চতুর্থ মেয়াদ। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দ্য নিউজের বরাতে এ প্রকাশ করেছে জিও নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর প্রধান নেতা নওয়াজ শরিফ ২০২৪ সালের এই সাধারণ নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হবেন বলে মার্কিন মিডিয়া এবং থিংক ট্যাংকগুলোর পাশাপাশি বিবিসি, গার্ডিয়ান এবং এএফপিসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়া আউটলেটগুলো অনুমান করছে।
প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, বৃহস্পতিবার পাকিস্তানিরা যখন সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেবে তখন নওয়াজ শরিফকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাতে না পারাটা হবে বিস্ময়কর।
নওয়াজ শরিফ, যিনি তিনবার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন এবং গত বছর স্ব-ঘোষিত নির্বাসন থেকে ফিরে এসেছিলেন, এবার তিনি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ সব ধরনের অভিযোগ ও মামলা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে সুযোগ পাবেন। যেসব কারণে তিনি ২০১৭ সালে তার প্রধানমন্ত্রীত্বও হারিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নওয়াজ শরিফকে সাবেক আরেক প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইমরান খানের কট্টর সমর্থকদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। ব্যাপক জনপ্রিয় ইমরান বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দি রয়েছেন। গোপন সাইফার মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ড, তোশাখানা মামলায় ১৪ বছর এবং অবৈধ বিয়ের মামলায় তিনি সাত বছরের কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছেন।
ইউএস টিভি ব্লুমবার্গ রিপোর্ট করেছে, গত সপ্তাহে করাচিতে পাকিস্তানের অভিজাত ব্যবসায়ীদের এক সমাবেশে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অনেক লোক বৃহস্পতিবারের এই নির্বাচনে ঝুলন্ত সংসদ এবং তারপর একটি দুর্বল জোট সরকার গঠন হতে পারে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তাদের বেশিরভাগই আশা করছেন, সেই জোট সরকার নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বেই হবে-অথবা তার ভাই শেহবাজের নেতৃত্বেও হতে পারে।’
এছাড়া দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এর প্রধান যদি ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয়ী না হন তাহলে অবাক হতে হবে।
‘নওয়াজ শরিফ যদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসেন, তাহলে তিনি দুটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন। একটি হচ্ছে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সঙ্কট, বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং অন্যটি রাজনীতিতে প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্ক বজায় রাখা। আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের ফেলো মাদিহা আফজালের বরাতে এমনটি ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে।’
আরেক মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে,নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে এগিয়ে ছিলেন ইমরান খানের দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরিফ। ৭৪ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী পুনরায় নির্বাচিত হতে চাইছেন এবং তেমনটি হলে বিদেশে কয়েক বছরের স্বেচ্ছা-নির্বাসনের পর এটি হবে নওয়াজের জন্য উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন।’
সিএনএন আরও বলেছে,নিহত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির কাছ থেকে নওয়াজ শরিফকে শক্তিশালী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। ৩৫ বছর বয়সী বিলাওয়াল এবারই প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী হয়েছেন।’
যুক্তরাজ্যের সাবেক সিনিয়র কূটনীতিক এবং কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক টিম উইলাসি-উইলসি বলেছেন, ‘নওয়াজ শরিফ একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিক। তিনি সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারদর্শী। তিনি ভারতের সাথেও সুসম্পর্ক চাইবেন।’
এদিকে হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঐতিহাসিকভাবেই সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান। যদিও সশস্ত্র বাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে না বলে দাবি করে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে নওয়াজ শরিফকে জেনারেলরা সমর্থন দিচ্ছেন।
এর আগে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তারা ইমারন খানকে বেছে নিয়েছিলেন। নওয়াজ ও ইমরান, দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রীই একই অভিযোগ করেছিলেন, সামরিক বাহিনীর ইশারায় ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন তারা। তবে বরাবরের মতো সামরিক বাহিনী তা অস্বীকার করে আসছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে কে আসলে বিজয়ী হবেন তা স্পষ্ট না হলেও এটি নির্ধারণে পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর ক্ষমতাধর জেনারেলরা বেশ বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। স্বাধীনতার পর থেকে গত ৭৬ বছরে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশটিতে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে।’