নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রথম আলো বিক্রির প্রক্রিয়া মাঝখানে থেমে যাওয়ার পর আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। বুধবার এবং বৃহস্পতিবার গুলশানের একটি বাসায় প্রথম আলো বিক্রির ব্যাপারে আলাদা আলাদা দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে বাংলা ইনসাইডারের কাছে নিশ্চিত তথ্য আছে। এই বৈঠকে মিডিয়া স্টারের সিংহ মালিকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।’
গত বুধবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্কয়ার গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা এবং একজন পরিচালক। তারা প্রথম আলো বিক্রির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন। একই ধরনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় একই বাড়িতে বৃহস্পতিবার। ওই বৈঠকে এস আলম গ্রুপের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা এবং একজন পরিচালক উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন একজন ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। প্রথম আলোর মালিক প্রতিষ্ঠান মিডিয়া স্টারের পক্ষ থেকে তিন জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন এবং এই বৈঠকগুলোতে মিডিয়া স্টারের সিংহভাগ মালিকানায় থাকা সিমিন রহমান টেলিফোনে কথা বলেন বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে।’
গত বুধবারের বৈঠকে স্কয়ার গ্রুপের কাছে প্রথম আলো বিক্রির আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেশ করা হয়। এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রথম আলোর বর্তমান বাজার মূল্য পাঁচশ কোটি টাকার বেশি। তারা প্রথম আলোর ৭৩ শতাংশ শেয়ার বিক্রির জন্য পাঁচশ কোটি টাকা মূল্য নির্ধারণ করেছেন।
এ ছাড়াও যে প্রতিষ্ঠান বা যিনি প্রথম আলো কিনবেন তার জন্য পাঁচটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে-
প্রথমত, প্রথম আলোর মিডিয়া স্টারের সিংহভাগ শেয়ার যিনি কিনবেন তিনি প্রথম আলোর সম্পাদকীয় নীতি পরিবর্তন করবেন না বা করা যাবে না।
দ্বিতীয়ত, সম্পাদক বা অন্য কোন সংবাদকর্মীকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অযৌক্তিক কারণে চাকরিচ্যুত করা যাবে না।
তৃতীয়ত, প্রথম আলো সামাজিক দায়বদ্ধ কর্মসূচি, যেমন- দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো, কম্বল বিতরণ- যে সমস্ত কার্যক্রমগুলো প্রথম আলো ট্রাস্ট এর মাধ্যমে সংঘটিত হচ্ছে সেগুলোকে অব্যাহত রাখতে হবে।
চতুর্থত, প্রথমা, বন্ধুসভা, কিশোর আলোর মত প্রথম আলোর অন্যান্য উদ্যোগগুলোকে বন্ধ করা যাবে না। সেগুলোকে অব্যাহত রাখতে হবে।
পঞ্চমত, সম্পাদক ও প্রকাশকের শেয়ার বিক্রি হবে না। প্রথম আলোতে সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমানের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ার আছে। এছাড়া বাকি শেয়ারগুলো ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকদের। লতিফুর রহমানের মৃত্যুর পর মিডিয়া স্টারে সিমিন রহমান ছাড়াও তার মা শাহনাজ রহমান এবং বোন শাযরেহ হকের শেয়ার রয়েছে।’
এই শেয়ারগুলোর মধ্যে সিমিন রহমান, তার ছোট বোন শাযরেহ হক এবং মা শাহনাজ রহমানের শেয়ারগুলো বিক্রি হবে বলে জানা গেছে এবং সেই বিক্রি প্রক্রিয়ার মধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা হয়েছিল। প্রথমে প্রথম আলো কেনার জন্য ৭ থেকে ১০টি প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হলেও এখন দুটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চূড়ান্ত আলাপ-আলোচনা চলছে।
উল্লেখ্য যে, লতিফুর রহমানের মৃত্যুর পর ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকানা নিয়ে বিরোধ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। ট্রান্সকমের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা জামিনে রয়েছেন। গত পরশুদিন তাদের রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিল।কিন্তু আদালত রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। আর এই পারিবারিক বিরোধের কারণেই প্রথম আলো বিক্রি হবে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, স্কয়ার এবং এস আলম গ্রুপ-দুইজনকেই প্রথম আলোর শর্তগুলো দেওয়া হয়েছে। এখন তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে এ নিয়ে আবারও বৈঠক করবে বলে জানা গেছে।’