পর্দার পরিচয় ও বিধানঃ

পর্দা করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ। বিশেষ করে আমাদের দেশে পর্দা শব্দটি বেশি প্রচলিত, অথচ পর্দা শব্দটি উর্দু ভাষায় ব্যবহার হয়ে থাকে, আরবিতে বলা হয় হিজাব।

এর অর্থঃ আবরণ, ঢাকনা কিংবা অন্তরাল,ইত্যাদি। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ধর্মীয় বিধান মোতাবেক প্রাপ্তবয়স্ক সকল শ্রেণী পেসার নর-নারীর জন্য দেহের নির্দিষ্ট অঙ্গগুলো ঢেকে রাখার নামই হচ্ছে পর্দা তথা হিজাব।

♦মুমিন পুরুষকে পর্দার নির্দেশঃ মুমিন পুরুষদের পর্দা করার বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে- কেননা মহান আল্লাহ বলেনঃ মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ( সূরা নূর- আয়াত নংঃ ৩০) মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে।

মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা নূর- আয়াতঃ) মহান আল্লাহ তাআ’লা তাঁর নিজ বান্দাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেনঃ যেগুলোর প্রতি নজর করা আমি আল্লাহ নিষেধ করেছি সেগুলোর প্রতি তোমরা নজর করিওনা। নিষিদ্ধ জিনিস হইতে নজরকে হেফাজত নিবে,যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কিংবা ভুলক্রমে নজর পড়ে তাহলে সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিবে এবং দ্বিতীয়বার আর নজর দিবে না হাদিসে এসেছেঃ জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ আল বাজালী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাঃ কে হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে যাওয়ার ব্যপারে জিগ্যেস করলে তিনি বলেনঃ সাথে সাথেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিবেন। মুসলিমঃ (৩/১৬৯৯) সুতরাং ভুলক্রমে প্রথম নজরেই গুনাহ হয় না। তাই মনে রাখবেনঃ দৃষ্টি পড়ার পর অন্তরে ফাসাদ সৃষ্টি হয় বলেই লজ্জাস্থানকে রক্ষা করার জন্য দৃষ্টি নিম্নমুখী রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দৃষ্টিও ইবলিশের তীরসমূহের মধ্যে একটি তীর। সুতরাং ব্যভিচার হতে বেঁচে থাকার জন্য দৃষ্টিকে নিম্নমুখী রাখাও জরুরি। যেমনঃ মহান আল্লাহ বলেন- সে সকল মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, – যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে।(সূরা আল মু’মিনূন:৫)

♦পর্দা না করার পরিণাম মহান আল্লাহ বলেনঃ যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। (সূরা আন-নূর:১৯) হাদিসে পাওয়া যায়! হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করিম সাঃ ববলেছেন, নারীরা হল পর্দায় থাকার বস্তু। সুতরাং তারা যখন (পর্দা উপেক্ষা করে) বাহিরে আসে,তখন শয়তান তাদেরকে ( অন্য পুরুষের চোখে) সুসজ্জিত করে দেখায়। (জামে তিরমিজি, হাদিস ৩/১১৭৩)

♦অন্ধদের সাথেও পর্দা করতে হবে! উম্মুল মুমিমীন হযরত উম্মে সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা তিনি এবং মায়মুনা (রাঃ) রাসূল সাঃ এর নিকট বসা ছিলেন। হঠাৎ সেখানে আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম এসে প্রবেশ করলেন। রাসূল সাঃ উম্মে মায়মুনাকে রা-কে বললেন, তোমরা (আগন্তুক) লোকটি থেকে পর্দা করো, আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী (সাঃ)! লোকটাতো অন্ধ আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছে না। তখন রাসূল সাঃ বললেন, তোমরা দু’জনও কি অন্ধ যে তাকে দেখতে পাচ্ছ না? ( তিরমিজি, হাদিস নংঃ ৪/২৭৭৮) আসলে আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যারা এভাবেই বলে থাকেন যে নিয়ত ভালো থাকলেতো পর্দা করার কোন প্রয়োজন নেই। তাই তারা এই সকল ভিত্তিহীন চিন্তাকে পুঁজি করে যে-কোন নারীর দিকে নজর দেওয়া,গল্প,আনন্দ, বিনোদন, ইত্যাদিতেও মেতে ওঠেন। এবং মনে মনে ভাবেন যাদের নিয়ত খারাপ শুধু তাদের জন্যেই পর্দার বিধানা,(নাউজুবিল্লাহ)। অথচ এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল এবং ইসলাম বিরোধী আর কিছুই না। অন্যথায় আপনারাই নিজে নিজে বিবেক দিয়ে একটু ভাবুন যে উল্লিখিত হাদীসের বর্ণনাকৃত ঘটনাটি কাদের সাথে ঘটেছে? সুতরাং বিবেক দিয়ে চিন্তা করলেই অনেক প্রশ্নের জবাব মিলবে।

♦পর্দায় থাকার ফলাফল। মহান আল্লাহ বলেন- হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরা আল আহযাব:৫৮) শরীয়তের মানদণ্ডে যদি আমরা পর্দার বিধান করি তাহলে অবশ্যই নারী ও পুরুষের সংযত জীবন-যাপন ব্যক্তি-পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্রে এককথায় সর্বস্তরে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। সে জন্যেইতো মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন মাজিদে গোটা মানবজাতিকে হুশিয়ার করে দিয়ে ঘোষণা করেছেন, ‘হে মানবজাতি! তোমরা এ শান্ত পৃথিবীর মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি কর না।’ সুতরাং পর্দার লংঘন করে চলাফেরা করা, দুনিয়ার কর্ম সম্পাদন করা নারী-পুরুষ কারো জন্যই শোভনীয় নয়। আল্লাহ তাআলা গোটা জাতিকে এই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পর্দা ফরজ করেছেন,এবং নারী ও পুরুষদের আত্ম-সম্মানবোধ ও মর্যাদা রক্ষায় পর্দার পরিপূর্ণ বিধান পালন করে তাকওয়া অবলম্বন করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে দুনিয়ায় সুন্দর জীবন এবং পরকালের চিরস্থায়ী সফলতা অর্জনের লক্ষে পর্দার বিধান সমাজের সর্বস্তরে বাস্তবায়নে প্রত্যেক মুসলিম নারী ও পুরুষদের কাজ করে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মাও.মোয়াজ্জেম বিন মোশাররফ,ফেনী

নিয়মিত লেখকঃ Thikana.press

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপি-যুবদলের সংঘর্ষ, নিহত ১

নিজস্ব প্রতিবেদক: নরসিংদীর শেখেরচরে ঝুট ব্যবসা এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও যুবদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১ জন নিহত এবং আরেকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার

ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে ইসরায়েলের হামলায় নিহত ২

অনলাইন ডেস্ক: ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল আইআরআইবিতে ইসরায়েলের বোমা হামলায় দুইজন নিহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে ইসলামিক রিপাবলিক নিউজ এজেন্সি (আইআরএনএ)। তাদের মধ্যে একজন সংবাদ সম্পাদক,

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নেই, তাই গরুর দাম কম: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: গাবতলীতে কোরবানির হাট পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নেই, আর নেই দুর্নীতিবাজরাও। তাই গরু

রাজশাহীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, হাতবোমার বিস্ফোরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ডের কোট বুলনপুর এলাকায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাতটার দিকে শুরু হওয়া এ

চীনে বাদুড়ের দেহে নতুন করোনাভাইরাসের সন্ধান, মানবদেহে ছড়ানোর শঙ্কা

ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: বাদুড়ের দেহে নতুন একটি করোনাভাইরাস আবিষ্কার করেছেন চীনের উহান ইনস্টিউট অব ভাইরোলজির গবেষকরা। তবে মানবদেহে এখনো এই ভাইরাস শনাক্ত হয়নি। গত

আগে গণহত্যা ও গুমের বিচার, তারপর নির্বাচনের কথা ভাবা যাবে: মামুনুল হক

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া ফেব্রুয়ারির নির্বাচন মানবে না জনগণ। তাই আগামী নভেম্বরের মধ্যে গণভোটের