নিজস্ব প্রতিবেদক: বাজেট নিয়ে বড় ধরনের আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। বিএনপি নেতারা বলেছিল যে, ঈদের পর তাদের ভাষায় গণবিরোধী বাজেটের বিরুদ্ধে তারা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে। কিন্তু পরিবর্তন আতঙ্কে বিএনপির সব আন্দোলন ভেস্তে গেছে। বিএনপি এখন নিজেদের ঘর সামলাতে ব্যস্ত। দলের নেতাকর্মীরা প্রতিদিন আতঙ্কে থাকছেন কখন কার পদ যায়, কে টিকে থাকে এ নিয়ে। বিএনপির মধ্যে এই আতঙ্ক এখন দুর্বিষহ অবস্থায় নিয়ে গেছে দলটিকে। দলের নেতাকর্মীদের এখন আন্দোলনের জন্য মাঠে নামানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।’
উল্লেখ, গত ১৩ জুন থেকে বিএনপিতে শুরু হচ্ছে তারেক জিয়ার স্বেচ্ছাচারিতা এবং তছনছ অভিযান। এই তছনছ অভিযানে দলের বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। ছাত্রদলের কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। যুব দলের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ৩৯ জনের পদ পরিবর্তন করা হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে একটি টালমাটাল অবস্থা চলছে বিএনপির মধ্যে। আর এই অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কেউ জানে না।
লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এখন সিনিয়র নেতাদেরকে এড়িয়ে চলছেন। তাদের সাথে রুটিন কথাবার্তা বলা ছাড়া তেমন কোনো পরামর্শ গ্রহণ করছেন না। সারাক্ষণই তিনি ব্যস্ত থাকছেন তৃণমূলের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ, আলোচনা করতে। আর তৃণমূল এতে কিছুটা চাঙ্গা হয়েছে বটে, তবে নেতারা নতুন কোন কর্মসূচি নিয়ে এগোচ্ছে না।
এর আগে বিএনপি সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি অভিন্ন আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। এই লক্ষ্যে ৫৪ টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা ধারাবাহিক ভাবে আলাপ আলোচনা শুরু করেছিল। সেই আলাপ আলোচনায় সমমনা রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল যে একটি স্টিয়ারিং কমিটি যেন গঠন করা হয়, যারা যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচিগুলো চূড়ান্ত করবে এবং আন্দোলনকে একটি যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করবে। কিন্তু সেই যৌথ আন্দোলনের প্রক্রিয়াও থেমে গেছে।’
বিএনপির নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, বাজেটের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তারা জনগণের সামনে তুলে ধরবে। অর্থপাচার, দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল বিএনপির পক্ষ থেকে। কিন্তু বিএনপির কোন নেতাই এখন আন্দোলনে আগ্রহী নয়।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূচকগুলো বলছে, এখন বিএনপি ঘর গোছাতে ব্যস্ত। দলের ভেতর যারা বিশ্বাসঘাতক, যারা দলীয় কর্মকাণ্ডে অমনোযোগী, যারা দায়িত্ব পালনে অক্ষম, তাদেরকে পর্যায়ক্রমে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নেরও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে বিএনপিতে আরও বড় ধরনের পরিবর্তন হবে বলেও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। বিএনপির এই পরিবর্তন ইতিবাচক না নেতিবাচক সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে এই পরিবর্তনের দমকা হওয়ায় এখন বিএনপির আরও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।’
বিভিন্ন সময়ে যারা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছিল। আন্দোলন সংগ্রামে নিজেদের ঝুঁকি নিয়েছিল তাদেরকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। বরং যারা চাটুকার, লন্ডনে নিয়মিত যোগাযোগ করেন, দলের কোন কর্মসূচিতে থাকেন না তারাই এখন দলে সবচেয়ে ক্ষমতাবান হয়ে উঠছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে যে পদোন্নতিগুলো ঘটেছে সেই পদোন্নতিতে তাদেরকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে যারা চাটুকার এবং সারাক্ষণ তারেক জিয়ার সমীহ করে চলে। দলের ভেতর যারা খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ তাদের আরও কোণঠাসা করা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে পরিবর্তনের চাপ বিএনপির এখন চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। এখন থেকে পিষ্ঠ অবস্থায় বিএনপি আন্দোলনে ফিরে আসবে কিভাবে সেটিই এখন দেখার বিষয়।’