নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচনের পরপর নতুন সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন বাতিল করার ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। আর সেই ষড়যন্ত্র এখন দৃশ্যমান হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এই নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা এখনও অব্যাহত রয়েছে। পর্দার আড়ালে এখনও নানামুখী চক্রান্ত ষড়যন্ত্র চলছে। সেই চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্র গুলো এখনও দৃশ্যমান আছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন নির্বাচন বাতিল করার জন্য ত্রিমুখী ষড়যন্ত্র চলছে। এই ত্রিমুখী ষড়যন্ত্রে একটি অন্যটির সঙ্গে সম্পর্কিত এবং তিনটি ধারার মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সব চেয়ে বড় উদ্যোক্তা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। যদিও মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করছেন, বিভিন্ন মন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করছেন কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার ম্যাথিউ মিলার যে নিয়মিত ব্রিফিং করেছেন, সেখানে তিনি ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান ইঙ্গিত করে যে তারা বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়টিকে এখন পর্যন্ত সমাপ্ত করেননি। বরং এটি নিয়ে আরও কিছু দিন জল ঘোলা হবে বলে ধারণা করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানের কারণেই উৎসাহিত হয়েছে বিএনপি। বিএনপি এখন এই নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। তারা ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয়নি, এটি ডামি নির্বাচন ইত্যাদি নানা বক্তব্য তুলে ধরে নতুন করে সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। আর এই সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টার পাশাপাশি কূটনীতিকদের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ শুরু করেছে বিএনপি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আবার নতুন নির্বাচন হলে বিএনপি তাতে যোগ দেবেন কি না-এই প্রশ্ন বিএনপি নেতৃবৃন্দকে করতে শুরু করেছেন বিভিন্ন পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকরা। তবে এই প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি তার আগের অবস্থানই এখন পর্যন্ত অটল রয়েছে। তারা বলছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি এখনও আশা করে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো শেষ পর্যন্ত তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং দ্রুত একটি নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবে। তখন তাদের আন্দোলন নতুন করে বেগবান হবে। এই কারণেই তারা আন্দোলনের কর্মসূচি না দিয়ে অধীর আগ্রহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো কী করে তার অপেক্ষায় আছে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক অবস্থান গ্রহণ করেছে তখন বাংলাদেশের সুশীল সমাজের একটি অংশ যারা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোর ইশারায় চলে তারা ৭ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে নতুন করে মাতম তুলেছেন। এই সমস্ত সুশীলরা বিক্ষিপ্ত ভাবে নির্বাচনের পর যে সমস্ত বক্তব্যগুলো দিচ্ছিলেন সেগুলোকে এক সূত্রে গ্রন্থিত করে টিআইবি একটি কাল্পনিক মনগড়া উদ্ভব গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যে গবেষণা প্রতিবেদনে গবেষণার ন্যূনতম নিয়ম-কানুন এবং নীতি নৈতিকতা অনুসরণ করা হয়নি। নির্বাচনের পর থেকেই সুশীলদের পরিচিত কিছু মুখ যারা বিএনপি-জামায়াতপন্থি হিসেবে তারা যা বরছিলেন সেগুলোকে টিআইবি একত্রিত করেছে।’
ধারণা করা হচ্ছে সুশীলরা টিআইবির এই রিপোর্ট নিয়ে এখন নতুন করে হৈ চৈ করবেন এবং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে নতুন নির্বাচন দাবি করবেন। এই ত্রিমুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য সরকার কি করবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে সরকারের প্রভাবশালীরা বলছেন, আমাদের একমাত্র দায় জনগণের কাছে, অন্য কারো কাছে নয়। নির্বাচন কেমন হয়েছে সেটি জনগণ ভালো মতোই জানে। কাজেই এ নিয়ে কে কি বললো তাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোন কিছু যায় আসে না।’