নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা, আন্দোলনের ব্যর্থতা ইত্যাদি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। আর এই চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তাদের মধ্যে প্রশ্নের উদয় হয়েছে তারা কি পশ্চিমাদের ফাঁদে পড়েছিল? যেমন তারা ফাঁদে পড়ে ছিল ২০১৮ সালে ড. কামাল হোসেনের। এই প্রশ্নটি এখন বিএনপির মধ্যে আলোচিত হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অন্ধ বিশ্বাস তাদের ভুল কৌশল ছিল-এমন মন্তব্য করছে বিএনপি তার আত্মসমালোচনা পর্বে।
উল্লেখ্য যে, ২০১৮ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ছিলেন ড. কামাল হোসেন। ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে ঐক্য করাটা ভুল ছিল এবং এটি একটি পাতানো ফাঁদ ছিল-এ কথা ২০১৮ নির্বাচনের পর বিএনপির ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ কমিটি আবিষ্কার করে। তারা দেখায় যে, আওয়ামী লীগের রাজনীতির ধারক বাহক ড. কামাল হোসেন। অথচ আওয়ামী বিরোধী যে রাজনৈতিক গোষ্ঠী তাদেরকে উপেক্ষা করে ড. কামাল হোসেনের সাথে ঐক্য করে বিএনপি তার নিজের আদর্শকে যেমন বিচ্যুতি দিয়েছে তেমনি পাতা ফাঁদে পা দিয়ে তারা তাদের সর্বনাশ ডেকেছিল।
২০১৮’র নির্বাচনের পর থেকে ড. কামাল হোসেনকে এগিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। ড. কামাল হোসেনের প্রকাশ্য সমালোচনাও করেছেন বিএনপির অনেক নেতা। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তারা এবার জোটবদ্ধ ভাবে আন্দোলন করছে না। কারণ জোটের সঙ্গীরা কখন কী করে তার দায় বিএনপি নিতে চায় না। আর এরকম বাস্তবতায় ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। প্রথম থেকেই এই আন্দোলনে এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিচ্ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতে বিএনপি আন্দোলনে অনড় অবস্থানে চলে যায়। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত দু বছর ধরে বলছিল যে বাংলাদেশে নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। এই নির্বাচনে যদি কারচুপি করা হয় এবং যদি অংশগ্রহণমূলক না হয় সে ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী কী বিধিনিষেধ প্রয়োগ করবে সে ব্যাপারেও হুমকি দিচ্ছিল। একাধিক মার্কিন প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং তারা সরকার এবং বিএনপির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। বিএনপি নেতারা এখন আত্মবিশ্লেষণ করতে গিয়ে মনে করছেন, এটি ছিল একটি পাতানো ফাঁদ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে ভারতের কূটনৈতিক নীতি বাংলাদেশে অনুসরণ করে।
বিএনপি যদি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য দুটি চ্যালেঞ্জ হত। প্রথমত, নির্বাচনে কারচুপি করা তাদের জন্য কঠিন হত। কোন অবস্থাতে ২০১৮’র মতো ঘটনা ঘটতে পারত না। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ইত্যাদি নিয়ে যে সমস্যা তাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে বিএনপি অত্যন্ত ভালো ফল করত। আর এই কারণেই ভারত চায়নি যে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। অন্তত বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা এখন তাই মনে করছেন।’
ভারতের পরামর্শেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সাজানো নাটক মঞ্চস্থ করে। যেখানে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা হয় যে, বিএনপি মনে করে যে নির্বাচনে না গেলেই তাদের জন্য ভালো এবং নির্বাচনে না গেলে সরকারের পতন ঘটবে। মূলত বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা নিশ্চিত করার জন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহায়ক শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করেছিল বলে বিএনপির অন্তত দুইজন নেতা মন্তব্য করেছে। তারা বলছেন যে, পুরো বিষয়টি ছিল ২০১৮’র মতো সাজানো নাটক। ২০১৮-তে যেমন বিএনপিকে নির্বাচনে এনে বেইজ্জত করা হয়েছিল তেমনি এবার বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার কৌশল নিয়েছিল ভারত। আর সেই কৌশল প্রয়োগের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ব্যবহার করেছিল।
বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, এই অঞ্চলে ভারতের বাইরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাবে না। পুরোটাই হয়েছিল একটি পরিকল্পিত ভাবে যেন বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে। তবে বিএনপির এই সমস্ত আত্ম বিশ্লেষণ এখন পর্যন্ত দলীয় অবস্থান নয় বলে বিএনপির একজন দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের আন্দোলনের ব্যর্থতা এবং অন্যান্য বিষয়গুলো আমরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করছি আমাদের নিজেদের স্বার্থে, ভবিষ্যতের জন্য।’