জহুরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: ব্যাংকিং নিয়মে নয় নিজের বানানো নিয়মে ব্যাংক চালাতেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচির জনতা ব্যাংকের তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল আমিন। নিজের ইচ্ছেমতো গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন ও জমা দিতেন। ক্যাশ ভোল্টের ৫ কোটি ২২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার হদিস এখনো মেলিনি। বুধবার (২৭ মার্চ) গিয়ে দেখা যায় গ্রাহকদের হিসাবের টাকা তাদের অজান্তে উত্তলন করেছে এই চক্রটি। এখন প্রশ্ন উঠছে তবে কি ৫ কোটি নাকি তারো বেশি পরিমান টাকা লোটাপ হয়েছে এই শাখা থেকে।
বুধবার (২৭ মার্চ) শাখাটিতে গিয়ে কথা হয় তামাই বাজারের মেসার্স মুসলিম ইউবিং ফ্যাক্টরির প্রোপাইটার আব্দুল মোতালেব জোয়ারদারের সাথে, তিন জানান, তার একটি ৪৮ লক্ষ টাকর সি সি লোন করা ছিল। তবে তিনি এখনো লোনটি উত্তোলন করেননি। কিন্তু তার ব্যাংক হিসাব দেখা যায় তিনি পুরো টাকাটি উত্তোলন করেছেন। তার এই টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে তার সিরিয়ালের চেক ব্যবহার করা হয়নি। অন্য একটি থেকে টাকাটি উত্তোলন করা হয়েছে। এ ঘটনায় হতবাক হয়ে তিনি ঠিক কি করবেন তা বুঝতে পারছেন না। শুধু আব্দুল মোতালেবই নয়। এমন ঘটনা ঘটেছে অনেকের সাথে। একই এলাকার ব্যবসায়ী চান টেক্সটাইলের আকন্দের হিসাবে তার অজান্তেই ১০ লক্ষ টাকা উত্তলন করা হয়েছে। আল ফারুক স্টোরের শহিদুল ইসলামের ২৪ লাখ টাকার সিসি লোনের মধ্যে তার অজান্তেই চেক জালিয়াতে করে ৫ লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। শুধু সিসি লোন হিসাবে নয় ব্যক্তিগত সঞ্চয় হিসেবে এমন জালিয়াতি করা হয়েছে। ঝিন্না মোল্লার ব্যক্তিগত হিসেবে ৪ লক্ষ ৩৫ হাজার ৯১০ টাকা থাকার কথা থাকলেও সেখানে আছে মাত্র ১ লক্ষ ৫ হাজার ১১২ টাকা। মজার বিষয় হল এ সকল লেনদেনে গ্রাহকরা তাদের ফোনে এসএমএস পাওয়ার কথা থাকলেও কোন প্রকার এসএমএস ফোনে আসেনি। গ্রাহকরা এ বিষয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বললে, ম্যানেজার তাদের বলেন সার্ভারে ত্রুটি থাকার কারণে গ্রাহক এসএমএস পান না।
বুধবার সকালে ব্যাংকে গিয়ে দেখা যায় তামাই শাখার নতুন ব্যবস্থাপক কামরুল ইসলামকে সাথে নিয়ে জনতা ব্যাংকের হেড অফিসের পাঁচজন সদস্য বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন।
জনতা ব্যাংক হেড অফিসের এজিএম সাদিকুর রহমনকে প্রদান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে আরো রয়েছেন ব্যাংকের এসপিও মোস্তফা কামাল সিনিয়র অফিসার মাসুদুর রহমান প্রিন্সিপাল অফিসার শরীফ মোহাম্মদ ইশতিয়াক, এরিয়া ম্যানেজার সঞ্জিত কুমার। এর আগে ২৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া অফিসের যুগ্ন পরিচালক এস এম সাজ্জাদ হোসেনকে প্রধান করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তামাই শাখার কেজুয়াল পিয়ন শহিদুল ইসলাম বলেন, গত ৭ /৮ মাস ধরে শাখা ব্যবস্থাপক আল আমিনে কথা অনুসারে তিনি বিভিন্ন গ্রাহকের চেকে নিজে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন। ব্যবস্থাপকের কথায় অনেক জমা ভাউচার তিনি স্বাক্ষর করেছেন। কেন কেন স্বাক্ষর করেছেন এমন প্রশ্ন তিনি বলেন, আমরা তাদের চাকরি করি তিনি যা অর্ডার করতেন আমাদের তাই করতে হতো। আমি তো শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তাদের আইডির মাধ্যমে টাকা গুলো দেয়া হতো। তিনি বলেন অনেক শ্রীলং গ্রাহকের হিসেবে টাকা না থাকলেও ম্যানেজার নিজে এসে তাদের টাকা দিত।
এসকল বিষয়ে নতুন ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তদন্ত শেষে স্যাররাই ব্যবস্থা নিবে।
এরই মধ্যে এ ঘটনায় রোববার রাতে তামাই শাখার ব্যাংক ম্যানেজার সহ আরো দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি জনতা ব্যাংক তামাই শাখা হইতে ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক আল আমিন (৪২) সিরাজগঞ্জ ধানবান্দি পৌর এলাকার মো:হারান শেখের ছেলে, সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম (৩৪) বগুড়া ধুনট থানার বেলকুচি গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে, ব্যাংক অফিসার রাশেদুল ইসলাম (৩১) সিরাজগঞ্জ বনবাড়িয়া কাদাই গ্রামের জিয়াউল হকের ছেলে। এদেরকে চেজ হাজতে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রধান জনতা ব্যাংক হেড অফিসের এজিএম সাদিকুর রহমন বলেন, ঠিক কত টাকা গরমিল হয়েছে তার তদন্ত চলছে। গ্রাহকদের টাকার বিষয়ে হেড অফিস সিদ্ধান্ত নিবেন। যে সকল গ্রাহকের ঝামেলা হয়েছে তাদেরকে দরখাস্ত দিতে বলা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এর বাইরে কিছু বলা যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ জনতা ব্যাংক পিএলসি সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার তামাই শাখার ব্যাংকের ক্যাশভোল্ট থেকে ৫ কোটি ২২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার গরমিল ধরা পরে। পরে জনতা ব্যাংক পিএলসি সিরাজগঞ্জের এরিয়া অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো:নজরুল ইসলাম তামাই শাখার ব্যাংকের ম্যানেজার সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এঘটনায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ তিন জনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। হিসাব অনুসরে তামাই শাখার ক্যাশভোল্টে মোট ৭ কোটি ১১ লক্ষ ২৪০ টাকা থাকার কথা থাকলেও সেখানে বর্তমানে ১ কোটি ৭৭ লক্ষ ৬১ হাজার ২৪০ টাকা রয়েছে। বাকি ৫ কোট ২২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বিশাল অংকের হিসাব অনুসারে ক্যাশভোল্টেই মজুদ থাকার কথা ছিলো।