নিজস্ব প্রতিবেদক: দুই যুগ পর মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন রেমিটেন্স যোদ্ধা ইসমাইল আলী। তবে কর্মক্ষম অবস্থায় নয়, ফিরেছেন পঙ্গু হয়ে। দীর্ঘ প্রবাস জীবনে হারিয়েছেন স্বজনদেরও। এখন বিদেশ ফেরত এই পঙ্গু খুঁজছেন বিনামূল্যে থাকার মতো একটি বৃদ্ধাশ্রমের আশ্রয়।
ইসমাইল আলী বর্তমানে রয়েছেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে। গত ৩১ জানুয়ারি ভোরে দেশে ফিরে বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ হেল্প ডেস্কে গিয়ে কোনো বৃদ্ধাশ্রমে পৌঁছে দেওয়ার সহযোগিতা চান তিনি। পরে সরকারি সংস্থাটি তাকে তুলে দেয় ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার বিভাগের কাছে। সেই থেকে তিনি রয়েছেন বেসরকারি সংস্থাটির তত্ত্বাবধানে।
ইসমাইলের বাম হাত ও পা প্যারালাইসিস আক্রান্ত। তিনি নিজে উঠাবসা করতে বা টয়লেটেও যেতে পারেন না। হুইল চেয়ারে চলাচলকারী ইসমাইলকে বর্তমানে মুখে তুলে খাইয়েও দিচ্ছে ব্র্যাক কর্মীরা।
প্রবাসফেরত ৪৫ বছর বয়সী ইসমাঈল আলী জানান, মালয়েশিয়ায় এক বছর আগে হঠাৎ প্যারালাইসিস আক্রান্ত হন তিনি। সেখানে চিকিৎসার জন্য চেষ্টা করলেও সে দেশে ভিনদেশীদের জন্য তেমন চিকিৎসা সেবা না থাকায় টাকা খরচ করলেও পাননি পর্যাপ্ত চিকিৎসা। গত এক বছর ঘরে বসে থেকে এবং চিকিৎসার পেছনে সব টাকা খরচ করে নিঃস্ব হয়ে গেছেন তিনি।’
প্রবাসে টানা দীর্ঘদিন থাকায় বিয়ে করার সুযোগ হয়নি দাবি করে তিনি জানান, ছোটকালেই মাকে হারিয়ে ছিলেন, একমাত্র অভিভাবক বাবাও মারা গেছেন তার বিদেশ যাওয়ার কয়েক বছর পর। সেই থেকে স্বজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন ইসমাইল। তাই চিকিৎসা ও থাকার সহযোগিতা চান তিনি।
ব্র্যাক বলছে, ইসমাইল আলীর পার্সপোর্টের ঠিকানায় লোক পাঠিয়ে তার কোনো স্বজনের সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে জানিয়ে ব্র্যাক বলছে, প্যারালাইসিস আক্রান্ত ইসমাইলকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা ও একটি নিরাপদ আবাসন দিতে চেষ্টা করছে তারা।’
ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টার ম্যানেজার আল আমিন নয়ন বলেন, ইসমাইল আলীকে বর্তমানে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি তার পার্সপোর্টে দেওয়া ঠিকানায় লোক পাঠিয়ে তার স্বজনদের খোঁজা হয়েছে। কিন্তু ওই ঠিকানায় তার পরিচিত কাউকে পাওয়া যায়নি। আমরা ধারণা করছিলাম তিনি হয়তো অভিমান করে বাড়ি যাচ্ছেন না। তাই এখনো তার পরিবারের খোঁজে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। একইসঙ্গে তাকে চিকিৎসা করানোরও চেষ্টা করছি। যদি পরিবার না পাওয়া যায় তাহলে তাকে একটি ভালো বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর চিন্তা রয়েছে।’
ইসমাইল আলীকে সহায়তা করতে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ব্র্যাকের এই কর্মকর্তা।
ব্র্যাকের তথ্যমতে, গত ৪ বছরে ১২৮ জন শারীরিক বা মানসিক অসুস্থ বিদেশফেরৎ মানুষকে সহায়তা দিয়ে নিজ ঠিকানা খুঁজে দিয়েছে সংস্থাটির অভিবাসন সহায়তা বিভাগ।’