নিজস্ব প্রতিবেদক: সমালোচনার জেরে নতুন শিক্ষাক্রম থেকে অন্তর্বতীকালীন সরকার মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় মাধ্যমিক পর্যায়ের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির এক কোটি শিক্ষার্থীকে বছরের শেষ দিকে বসতে হবে বার্ষিক পরীক্ষায়। নতুন শিক্ষাক্রমের বই অনুসারে ডিসেম্বর নাগাদ এ শ্রেণিগুলোর শিক্ষার্থীদের গতানুগতিক নিয়মে বার্ষিক পরীক্ষা বসতে হবে বলে ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও নতুন শিক্ষাক্রমে প্রচলিত লিখিত পরীক্ষার বদলে শিক্ষার্থীর দক্ষতার ভিত্তিতে মূল্যায়নের কথা বলা ছিল। এমন পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক পর্যায়ের এ চার শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা নিতে সিলেবাস ও প্রশ্নকাঠামো প্রস্তুত করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই ওই সিলেবাস ও প্রশ্নকাঠামো প্রকাশ করে তা শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে বলে আশা এনসিটিবির কর্তাদের।
বুধবার (৪ আগস্ট’) নিজ দপ্তরে সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান।
পরীক্ষার বদলে মূল্যায়ন নির্ভর নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে স্বীকার করে শিক্ষাবর্ষের নবম মাসে এসে গত ১ সেপ্টেম্বর আগের অর্থাৎ ২০১২ সালের জাতীয় শিক্ষাক্রমের আদলের শিক্ষাব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে চলতি বছরই ডিসেম্বর মাসে হাইস্কুলগুলোতে ফিরছে বার্ষিক পরীক্ষা। তবে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই এখনই পরিবর্তন হচ্ছে না। নতুন শিক্ষাক্রমের বইগুলোই আপাতত পড়তে হবে শিক্ষার্থীদের। আর সেখান থেকেই আসবে বার্ষিক পরীক্ষা প্রশ্ন।
যদিও ২০২৩ সালের শুরুতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের পর থেকেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনটিসিবি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, এ শিক্ষাক্রমে পরীক্ষা নির্ভরতা কমবে। পরীক্ষার বদলে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিতে অজির্ত জ্ঞানের মূল্যায়ন করার ঘোষণা ছিল তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে। তবে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরে আসায় আগের ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে বার্ষিক পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন শিক্ষাক্রমের বইতে পুরানো নিয়মের পরীক্ষা আয়োজনের বন্দোবস্ত করছে এনসিটিবি।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রমের বইয়ের ওপরই বার্ষিক পরীক্ষা নিতে শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে বেশ কয়েকটি সেমিনার করে সংশোধিত ও পরিমার্জিত মূল্যায়ন নির্দেশিকা প্রস্তত করা হচ্ছে। একইসঙ্গে প্রস্তুত হচ্ছে বার্ষিক পরীক্ষার সিলেবাস ও প্রশ্নকাঠামো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে তা চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই প্রকাশ ও স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
অভিজ্ঞতা নির্ভর শিক্ষার বইয়ের কোন কোন অংশ থেকে প্রচলিত লিখিত পরীক্ষা নেয়া যাবে তা খুঁজে বের করে আমরা ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বার্ষিক পরীক্ষার সিলেবাস প্রস্তুত করছি।-এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান
জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, নতুন যে শিক্ষাক্রমটি বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল মাধ্যমিক পর্যায়ে তা ছিল অভিজ্ঞতা নির্ভর। তবে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগের শিক্ষাক্রমের আদলের শিক্ষায় ফিরে গিয়ে ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অভিজ্ঞতা নির্ভর শিক্ষার বইয়ের কোন কোন অংশ থেকে প্রচলিত লিখিত পরীক্ষা নেয়া যাবে তা খুঁজে বের করে আমরা ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বার্ষিক পরীক্ষার সিলেবাস প্রস্তুত করছি। আর বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নকাঠামো প্রস্তুত করছি। বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন হবে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের আদলে। প্রতিটি বিষয়ে ছোট প্রশ্ন, বড় প্রশ্নের সমন্বয়ে প্রশ্নকাঠামো প্রস্তুত করা প্রক্রিয়া চলছে। শিক্ষক ও কারিকুলাম বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে সেমিনার করে সিলেবাস ও প্রশ্নকাঠামোর খসড়া প্রস্তুত করা হচ্ছে। আমরা শিগগিরই সিলেবাস ও প্রশ্নকাঠামো প্রকাশ করবো ও স্কুলে স্কুলে পাঠিয়ে দেব।
কবে নাগাদ সিলেবাস ও প্রশ্নকাঠামো প্রকাশিত হবে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমরা খসড়া প্রস্তুত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে তা উপস্থাপন করবো। পরে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে তা প্রকাশ করা হবে। আশা করছি চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই মাধ্যমিকের বার্ষিক পরীক্ষার সিলেবাস ও প্রশ্নকাঠামো প্রকাশ ও স্কুলে স্কুলে পাঠানো সম্ভব হবে।’