নিজস্ব প্রতিবেদক: বেনজীর আহমেদের পাসপোর্ট কেলেঙ্কারির কথা নতুন নয়। সরকারি চাকরি করে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থাকার পরও তিনি সরকারি পাসপোর্ট গ্রহণ করেননি। বরং ভুয়া ঠিকানায়, ভুয়া পরিচয় এবং ভুয়া পেশা দিয়ে তিনি সাধারণ পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন এবং সেই পাসপোর্ট দিয়ে তিনি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। এখন তার বেসরকারি পাসপোর্টের আসল রহস্য উদঘাটন করা গেছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে ২০২১ সালে তিনি তুরস্কের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।
তুরস্ক ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিদেশিদের জন্য নাগরিকত্বের দরজা খুলে দিয়েছিল। একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা দিয়ে বা বিনিয়োগ করে তুরস্কের নাগরিকত্ব পাওয়ার একটি বিধান রাখা হয়েছিল। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুই লক্ষেরও বেশি মানুষ তুরস্কের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিল এবং এর ফলে তুরস্কের বাইরে থেকে সম্পদ এসেছিল ১০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। আর এই নাগরিকত্ব গ্রহণের সুযোগ গ্রহণ করেছেন সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ। তিনি এখন তুরস্কের নাগরিক এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, তিনি তুরস্কের নাগরিকত্বের পাসপোর্ট গ্রহণ করেছিলেন এবং এই পাসপোর্ট গ্রহণের জন্যই তিনি সরকারি পাসপোর্ট গ্রহণ করেননি। বেনজীর তার স্ত্রী এবং কন্যার নামেও বিপুল পরিমাণ সম্পদ কিনেছেন এবং সেখানে বেনজীরের বিনিয়োগ শত কোটির বেশি। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে তিনি তুরস্কের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন বলে দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও তুরস্কে তার অন্তত তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট, একটি বাংলো এবং দুটি দোকান রয়েছে বলেও দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছেন।
সূত্রগুলো বলছে যে, ২০২১ সালের প্রথম দিকে বেনজীর, তার স্ত্রী জিসান আহমেদ এবং এক কন্যা তুরস্কের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন। বেনজীর আহমেদ জানতেন যে, তিনি যে কোন সময় সরকারের নজরে আসতে পারেন। তার ব্যাপক এবং সীমাহীন দুর্নীতির বিষয়টি একদিন না একদিন সামনে আসবেই। এ কারণেই তিনি তুরস্কের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
তুরস্কের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে বহুবিধ সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, এই দেশের পাসপোর্ট গ্রহণ করলে তিনি ইউরোপের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত এবং ইউরোপের নাগরিক হলে বিভিন্ন ইউরোপের দেশগুলোতে তিনি বিনা ভিসায় ভ্রমণ করতে পারবেন। সেই সমস্ত দেশে তিনি ব্যাংক অ্যাকাউন্টও করতে পারবেন। তুরস্কের পাসপোর্টে একশোরও বেশি দেশে বিনা ভিসায় ভ্রমণ করা যায়।’
দ্বিতীয়ত, তুরস্ক যে প্রশ্নহীন বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছিল, সেই বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে বেনজীর আহমেদ সেখানে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। এই বিনিয়োগের কারণে সেখানে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাসও করার সুযোগ লাভ করেছেন।
তৃতীয়ত, যেহেতু তিনি একটি বিশেষ সুযোগ গ্রহণ করেছেন তাই তার সম্পদ নিয়ে কোন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। তিনি সেখানে নিরাপদে থাকতে পারবেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো তুরস্কের নাগরিকদের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত সবসময় খোলা। তুরস্কের নাগরিকত্বের জন্য তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতেও দায় মুক্তির সুযোগ পাবেন এবং সেখানে তার বিনিয়োগ নিয়ে কোন ঝামেলা হবে। এখন দেখার বিষয় বিভিন্ন দেশে যে বেনজীর আহমেদ নামে-বেনামে সম্পদ গড়েছেন সেই সম্পর্দ গুলো উদ্ধারে সরকার কি পদক্ষেপ নেয় এবং বিদেশি পাসপোর্ট ধারী সর্বোচ্চ পদে থাকা এই দুর্বৃত্তকে আইনের আওতায় আনতে সরকার কতটুকু সক্ষমতার পরিচয় দেয়।’