নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২০ সালের এপ্রিলের পর এবারই দেশে গ্যাসের সরবরাহ সর্বনিম্ন। সারা দেশের শিল্পকারখানা ও বাসাবাড়িতে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। এই সরবরাহ ২০২১ সালের শেষ ছয় মাসের গড় সরবরাহ থেকেও কম।
গ্যাস সংকটের কারণে অনেক শিল্প-কারখানা দিনে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। গাজীপুর, সাভার, কোনাবাড়ী, নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের শিল্পাঞ্চলে চলছে এই সংকট। শিল্পমালিকরা বলছেন, একদিকে ডলার ক্রাইসিস অন্যদিকে গ্যাস সংকট চলতে থাকলে এই সেক্টরে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে। তারা বলেন, বেশ কিছুদিন হলো গ্যাসের সংকট তেমন ছিল না। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকে সংকট দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে এই সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। বেশিরভাগ এলাকায় দিনের বেলায় কল-কারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে।’
ধানমন্ডি, মহাখালী, নদ্দা, বসুন্ধরা, কুড়িল, ভাটারা, বাড্ডা, মিরপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা এলাকার বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। অধিকাংশ বাড়িতেই একই অবস্থা। কেউ কেউ মধ্যরাতে রান্না করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ কোনো কোনো বাসায় গ্যাস আসছে রাত দেড়টার পর। বাধ্য হয়ে অনেকে ইলেক্ট্রিক চুলার দিকে ঝুঁকছেন। কেউ কেউ আবার সিলিন্ডার গ্যাস কিনে নিয়েছেন। এতে তাকে মাসিক গ্যাস বিলের পাশাপাশি বাড়তি গুনতে হচ্ছে সিলিন্ডারের দেড় হাজার টাকা। যারা ইলেক্ট্রিক চুলা ব্যবহার করছেন তাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি বিল।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে দেশে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের কাজ চলছে। তবে সম্প্রতি যে সংকট চলছে সেটি কিছুদিনের মধ্যে সমাধান হবে। যদিও খুব তাড়াতাড়ি সংকট সমাধানের কোনো আশা দেখাতে পারেননি তিনি।’
মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করা গ্যাস সরবরাহে দেশে দুটি রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) আছে। গত নভেম্বর মাসে একটি ইউনিট সংস্কারের জন্য পাঠানো হয়। যে কারণে গ্যাসের সংকট বেড়েছে। সংস্কার শেষ হওয়ার দুই-একদিনের মধ্যেই ইউনিটটি গ্যাস সরবরাহ শুরু করবে।
গত অক্টোবর থেকে শীত শুরু হওয়ায় সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎখাতে কমেছে গ্যাসের চাহিদাও। তবে তার মানে এই নয় যে, বিদ্যুৎখাতের বেঁচে যাওয়া গ্যাস অন্য খাতগুলো বেশি পাচ্ছে।’
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে সরবরাহ রয়েছে ২৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। পেট্রোবাংলাসহ জ্বালানি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী গ্যাস সংকটের কারণে ২০২০ সালের এপ্রিলের পর এবারই দেশে গ্যাসের সরবরাহ সর্বনিম্ন। এই সরবরাহ ২০২১ সালের শেষ ছয় মাসের গড় সরবরাহ থেকেও কম। সে সময় ডলারের অভাবে স্পট মার্কেট থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি’) আমদানি বন্ধ ছিল। এলএনজির দামও তখন ছিল আকাশছোঁয়া।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, এই গ্যাস সংকটের পেছনে দেশীয় উৎপাদন কমে যাওয়া একটা কারণ। পাশাপাশি এলএনজি আমদানির পরিমাণও কমেছে। খুব নিকট ভবিষ্যতে এই সংকট থেকে উত্তরণের পথও দেখতে পাচ্ছেন না তারা।’