ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে একটা অদৃশ্য টানাপোড়েন চলছে। চীন এখানে অর্থায়ন করতে চায়। কিন্তু ভারত বরাবর নানা ইঙ্গিতে আপত্তি জানিয়ে আসছে। সম্প্রতি ভারত অর্থায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্পটি আদৌ আলোর মুখ দেখবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন দিল্লি ও বেইজিং সফরে এ বিষয়ে একটা মীমাংসা হতে পারে। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথমার্ধে দ্বিপক্ষীয় সফরে বেইজিং যাওয়ার কথা রয়েছে সরকারপ্রধানের। ভারতে কবে যাবেন সে বিষয়ে এখনো দিন-তারিখ ঠিক হয়নি। তবে চীনের আগেই প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর হতে পারে।
চীনে প্রধানমন্ত্রীর সফর এবং দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা করতে ইতোমধ্যে বেইজিং গিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। আগামীকাল সোমবার (৩ জুন’) বিকেলে সেখানে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকের লিখিত এজেন্ডায় তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের কথা উল্লেখ না থাকলেও বিষয়টি উঠবে-এমন ইঙ্গিত মিলছে বিভিন্ন সূত্রে।
ধারণা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন দিল্লি ও বেইজিং সফরে ‘তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প’ নিয়ে একটা মীমাংসা হতে পারে। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথমার্ধে দ্বিপক্ষীয় সফরে বেইজিং যাওয়ার কথা রয়েছে সরকারপ্রধানের। ভারতে কবে যাবেন সে বিষয়ে এখনো দিন-তারিখ ঠিক হয়নি। তবে চীনের আগেই প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর হতে পারে
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে গত ২৬ মে সচিব পর্যায়ের বৈঠকের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর দুদিন পর প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফরের প্রস্তুতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকেও তিস্তার প্রসঙ্গ ওঠে।
হিমালয় থেকে ভারতের সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। দুই দেশের অর্থনীতির জন্য এ নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
তিস্তা প্রকল্পের আওতায় আছে নদী খনন করে গভীরতা বাড়ানো, সারা বছর নৌ-চলাচলের ব্যবস্থা করা, নদীর দুই তীরে স্যাটেলাইট শহর নির্মাণ করা প্রভৃতি। এটি মূলত বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে তৈরি একটি প্রকল্প প্রস্তাব। যেটিতে বিদেশি অর্থায়ন দরকার। চীন এ বিষয়ে প্রথমে এগিয়ে আসে। অনেকে মনে করেন, চীনের এখানে আগ্রহের একটি বড় কারণ হচ্ছে তাদের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্প। এ প্রকল্পের মাধ্যমে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশকে এক সুতোয় গাঁথতে চায় বেইজিং।’
এ প্রকল্প নিয়ে চীনের ‘অতি’ আগ্রহ ভারত প্রথম থেকে সন্দেহের চোখে দেখে এসেছে। দেশটি মনে করে চীন তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে ভারতকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলতে চায়।
চীনের তৎপরতা কিছুটা হলেও সেদিকে ইঙ্গিত করে। বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, নির্বাচনের পর তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার বিষয়ে তিনি আশাবাদী।
নির্বাচনের ঠিক পরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে হওয়া এক বৈঠকের পর চীনা রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ চাইলে তিস্তা প্রকল্পের কাজ শুরু করার বিষয়ে চীন তৈরি আছে!
এদিকে, ভারতও এখন তিস্তা প্রকল্প নিয়ে নিজেদের আগ্রহের কথা প্রকাশ করেছে। গত মাসে ঢাকা সফরে এসে দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা তিস্তার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান কিছুটা খোলাসা করেন। তার মাধ্যমে ঢাকাকে তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়নের প্রস্তাব দেয় দিল্লি।
ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। তবে এবারের আলোচনায় বেশি গুরুত্ব পাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন বেইজিং সফর। বিশেষ করে সফরের তারিখ, দুই দেশের চাওয়া-পাওয়া, সইয়ের জন্য চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক তৈরি, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পসহ নানা উদ্যোগ আসতে পারে আলোচনায়। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে ৫০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ চীনা মুদ্রার সহায়তা চাইতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে। আর প্রধানমন্ত্রীর সফরে ‘আর্থিক সহায়তা’ ঘোষণা করতে পারে চীন।’