সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার যমুনা নদীবেষ্টিত জেলা সিরাজগঞ্জে তিন দিন ধরে নেই সুর্য্যরে দেখা। কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ার সঙ্গে পৌষের শীতে নাকাল হয়ে পড়েছে কর্মজীবী মানুষ। রাত ও দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় মানুষের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত মহাসড়কগুলোতে হেড লাইট জালিয়ে চলছে যানবাহন।
রবিবার (১৪ জানুয়ারি’) সকাল থেকেই কুয়াশাচ্ছন্ন রয়েছে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় বাইরে বের হতে না পারায় চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন-আয়ের, শ্রমজীবি ও চরাঞ্চলের মানুষ। এতে আয়ে টান পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের। তারা স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন না। রিকশা-ভ্যান চালকরা পাচ্ছেন না যাত্রী।।
এদিকে, তীব্র শীত হিমেল হাওয়ায় গরম কাপড় বিক্রির হিড়িক পড়েছে। বিত্তবানরা অভিজাত শপিং মলে ছুটলেও নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের অনেকেই ফুটপাতের দোকানগুলোর দ্বারস্থ হচ্ছেন। শিশু ও বৃদ্ধদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে বেশি।
শহরের বড়-বাজার, কাঠেরপুল, বাজার স্টেশন ও কড্ডার মোড়সহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, শরীরে একাধিক গরম কাপড় জড়িয়ে জীবিকার সন্ধানে নেমেছেন কর্মজীবী মানুষ। প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে দৈনিক আয়ে সংসার চালানো মানুষগুলোর স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়ে পড়েছে। শহরে লোক সংখ্যা কম হওয়ায় রিকশা, অটোরিকশা চালকেরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও যাত্রী পাচ্ছেন না।’
কথা হয় রাজ-মিস্ত্রী শহিদুল আলম, ছালাম শেখ, নজরুল ইসলাম ও জামাল উদ্দিন বলেন, সংসার চালাতে জীবিকার তাগিদে কাজে এসেছি। কিন্তু পানি নাড়ার পর শীতে হাত-পা বাঁকা হয়ে গেছে। তারপরও কষ্ট করে কাজ করতে হচ্ছে।
শহরের মুজিব সড়কের রিকশা চালক আব্দুল আলিম ও সুজাব শেখ বলেন, তিন ধরে শহরে মানুষের চাপ নেই। যাত্রী না থাকায় ভাড়া নেই বললেই চলে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২০০ থেকে ২৬০ টাকা কাজ করেছি। এখনও রিকশার জমার টাকা হয়নি। কি করবো শীতে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। জমা দিবো না সংসার চালাতে পারবো এই চিন্তায় হাত-পা গুটিয়ে বসে আছি।
জজ কোর্ট এলাকার পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী বাবু শেখ বলেন, শীত বাড়ছে। কয়েকদিন ধরে গরম কাপড় কেনার জন্য মানুষ ভিড় করছে। শীত যত বাড়বে তত আমাদের বেচা-কেনা বাড়বে। তবে এই শীত বেশি দিন থাকবে না বলে মনে হয়।
বাজার স্টেশনের সিএনজি চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, সন্ধ্যা থেকে বিকেল পর্যন্ত কুয়াশা থাকে। এর মধ্যে ঠান্ডা বাতাসও বেশি থাকায় যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। ছেলের জন্য স্কুলের ড্রেস বানাব সেই টাকা গোছাতে পারছি না। খুব বিপদে আছি শীত নিয়ে।
বাসের হেলপার শাহ আলম বলেন, সামর্থ না থাকায় ফুটপাত থেকে একশত টাকা দিয়ে গরম কাপড় কিনলাম। ফুটপাতের দোকানগুলো হলো গরিবের শপিংমল। তাই আমার মতো গরিবরা এ দোকানগুলো থেকে প্রতি বছর শীতের গরম কাপড় কিনে থাকেন। তবে যাদের শীতের গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই সেই সব ছিন্নমূল মানুষগুলো এই তীব্র শীতে গরম কাপড়ের অভাবে চরম কষ্টে রয়েছে।
তাড়াশ কৃষি আবহাওয়া অফিসের (ভারপ্রাপ্ত’) কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শনিবার ১১ দশমিক ৪ এবং শুক্রবার ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিলো।
তিনি বলেন, দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। এখন শৈত্যপ্রবাহ নেই তবে তিনদিন হলো সূর্যেরও দেখা নেই। আরও দু’একদিন এমন কুয়াশাচ্ছন্ন ও শীত থাকতে পারে।’