নিজস্ব প্রতিবেদক: বেগম জিয়া তার ফিরোজার বাসভবনে রাজনৈতিক তৎপরতার সক্রিয় হয়েছেন। গত কয়েকদিনে তাকে রাজনৈতিক অঙ্গনে অত্যন্ত তৎপর দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ঈদের আগে থেকেই তিনি বিএনপির বিভিন্ন শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। যদিও এই বৈঠকের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, এই বৈঠকগুলো স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা। বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়ার জন্যই বিএনপির নেতারা ঘটা করে ফিরোজায় যাচ্ছেন বলে বলা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে হঠাৎ করে বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি নেতারা এত উদ্বিগ্ন হলেন কেন? যে বিএনপির নেতাদেরকে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খালেদা জিয়াকে দেখতে যেতে দেখা যায়নি, তারা এখন ঘনঘন ফিরোজায় যাচ্ছেন স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে! কি এমন হল যে বেগম খালেদা জিয়া তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন!
ঈদের আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বেগম জিয়ার সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন এমন এক সময়ে যখন বিএনপিকে তছনছ করে দিয়েছিলেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। তারেক জিয়া মধ্যরাতে বিএনপিতে ‘ক্যু’ করেন এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটিকে ওলট পালট করে দেন। একইসঙ্গে তিনি ঢাকা মহানগর, চট্টগ্রাম মহানগর এবং বরিশাল মহানগরের সব আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে দেন। ছাত্রদলের কমিটিও বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন করেন। তারেক জিয়ার এই আগ্রাসী তৎপরতায় হতবাক হয়ে পড়েন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। তারা সবাই অন্ধকারে ছিলেন। তাদের কারও পরামর্শ গ্রহণ করেননি তারেক জিয়া। এই বিষয়টিকে বিএনপির নেতারা সহজ ভাবে নেননি। আর এ কারণেই তারা এখন তারেক জিয়াকে ঠেকানোর জন্য বেগম খালেদা জিয়ার কাছে ধর্না দিচ্ছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ঈদের আগের রাতে বিএনপি ত্যাগ করা এলডিপির নেতা কর্নেল অলি আহমেদ দেখা করেন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে। তিনিও যথারীতি স্বাস্থ্য এবং ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করার জন্য সাক্ষাত করেছেন বলে বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে কর্নেল অলি আহমেদ হলেন তারেক জিয়ার এক অন্যতম একজন সমালোচক, যিনি তারেক জিয়ার নেতৃত্ব সম্পর্কে আগে থেকেই সতর্কবার্তা দিয়ে আসছিলেন।
ঈদের দিন স্থায়ী কমিটির ছয় সদস্যদের পর যারা দেখা করেছিলেন তাদের বেশির ভাগই তারেক জিয়া বিরোধী বা তারেক জিয়ার কারণে দলের ভেতর কোণঠাসা অবস্থায় আছেন বলে মনে করা হয়। মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজউদ্দিন, আবদুল্লাহ আল নোমানের মতো বেগম জিয়ার ঘনিষ্ঠ কিন্তু তারেক জিয়ার চক্ষুশূল এসব নেতাদেরকে বেগম খালেদা জিয়া ডেকেছিলেন কেন তা নিয়ে বিভিন্ন রকম আলোচনা হতেই পারে। কারণ এদের যোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও বিএনপিতে অপাংক্তেয় ও অযোগ্য। তারেক জিয়ার সুনজরে না থাকার কারণে এরা বিএনপিতে কক্ষচ্যুত হয়েছেন বলে মনে করা হয়।’
অনেকেই মনে করেন যে তারেক জিয়ার আগ্রাসন প্রতিহত করার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে তারা সক্রিয় করার চেষ্টা করছেন। বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে ১৫ জন সাক্ষাৎ করেছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন যারা তারেক এবং বেগম জিয়া দু পক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলছেন। যেমন আবদুল আউয়াল মিন্টু, রুহুল কবির রিজভী। কিন্তু শুধুমাত্র তারেক জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এবং তারেক জিয়া যাদেরকে এখন খুব আস্থা রেখেছেন এ রকম কোন নেতাকেই বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে দেখা যায়নি। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল মাহমুদ টুকু, জহির উদ্দিন স্বপন, রুমিন ফারহানার মতো তারেক ঘনিষ্ঠ নেতৃবৃন্দ বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। এখান থেকেই বিএনপিতে বেগম জিয়া বনাম তারেক জিয়ার বিরোধ সুস্পষ্ট হয়ে যায়।
বিএনপিতে যে অস্থিরতা চলছে সেই অস্থিরতা নিরসনে বেগম খালেদা জিয়ার সক্রিয় ভূমিকা কামনা করছেন নেতৃবৃন্দ। আর এ কারণেই তারা ঘটনাবলির পুরো চিত্র বেগম জিয়ার কাছে তুলে ধরতে চেষ্টা করছেন। বেগম জিয়াও তারেকের কর্তৃত্ব কমানোর চেষ্টা করছেন বলে বিভিন্ন মহল থেকে আভাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো ইতোমধ্যে তারেক জিয়া বিএনপি দখল করেছেন। তৃণমূল থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্গ সংযোগী সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে তারেক জিয়া। বিভিন্ন জেলায় জেলায় যারা দায়িত্ব আছেন, যারা সক্রিয় তারা সবাই তারেক জিয়াপন্থি। ফলে খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র নেতাদের আস্থাভাজন হয়ে বিএনপির নিয়ন্ত্রণ কতটুকু গ্রহণ করতে পারবেন তা নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করছেন।’