নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামীকাল দুদিনের সফরে ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে আসছেন। বাংলাদেশের নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর এটি প্রথম সফর। নানা কারণেই এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।’ তবে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফর নিয়ে যেরকম উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ত, এখন সে রকম পরিস্থিতি নেই। ডোনাল্ড লু এর বাংলাদেশ সফর নিয়ে রাজনীতির মাঠে আলাপ আলোচনা আছে। তবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এর কেউই এই সফরকে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, ডোনাল্ড লু বা কে বাংলাদেশে আসল সেটি আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা এটা নিয়ে আগ্রহও নই। অথচ ৬ মাস আগেও তিনি এই ধরনের সফর নিয়ে প্রচণ্ড আগ্রহী ছিলেন। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে যখন ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফর করেছিলেন তখন বিএনপির মধ্যে রীতিমতো উৎসবের ঢেউ বয়ে গিয়েছিল। এখন বিএনপির নেতৃবৃন্দ কেন ডোনাল্ড লুর ব্যাপারে এত নিস্পৃহ-এর উত্তরে বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে যে, তারা মনে করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে ধোঁকা দিয়েছে এবং ডোনাল্ড লুর বিভিন্ন কঠোর কথাবার্তায় তারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে সবকিছু তাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু তাঁর ফলাফল ইতিবাচক হয়নি নিন।’
ডোনাল্ড লুর নির্বাচনের আগে শেষ তৎপরতা ছিল সকল পক্ষকে শর্তহীন সংলাপে বসার জন্য তিনি একটি চিঠি দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির কাছে এই চিঠি হস্তান্তর করেছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। কিন্তু এই চিঠি বিফলে গেছে। কোন পক্ষই এই চিঠির প্রেক্ষিতে আলোচনায় বসার জন্য আগ্রহী হননি। তাঁর আগেই ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন যে, বাংলাদেশে যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ না হয় তাহলে বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হবে। যারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করবে তাদেরকে ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই হুমকিও বাস্তবে প্রতিফলিত হতে দেখা যায়নি।
আওয়ামী লীগ অবশ্য শুরু থেকেই ডোনাল্ড লুর এ ব্যাপারে নেতিবাচক অবস্থায় ছিল। তবে ৭ জাতীয় নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড লুর সফর নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে যেমন উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ছিল, তিনি কি করবেন, না করবেন ইত্যাদি নিয়ে নানামুখী আলাপ আলোচনা ছিল, এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে তেমন কোনো আলোচনা নেই।’
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলছেন, এই সফরটি সরকারি এবং এখানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি কথা বলবেন এবং রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনায় প্রাধান্য পাবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তবে ডোনাল্ড লুর এই সফর নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই বাংলাদেশের সুশীল সমাজের। সুশীল সমাজ শুরু থেকে ডোনাল্ড লু এর সঙ্গে একটি গভীর সম্পর্ক বজায় রেখে চলছিল এবং নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড লুকে ব্যবহার করে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের কৌশলও দৃশ্যমান ছিল। কিন্তু নির্বাচনের পর পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় সুশীলরা আশাহত হয়ে পড়েন। এবার ডোনাল্ড লুর সফর ঘিরে তারা নতুন করে আশায় বুক বেধেছেন। ডোনাল্ড লুর সফরে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠকের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তবে কূটনৈতিক মহল মনে করছেন যে, ডোনাল্ড লু এই যাত্রায় তিনটি দেশ সফর করছেন। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত এবং শ্রীলঙ্কা সফর করছেন। এই উপমহাদেশের দেশগুলোর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে একটি রুটিন সফরের অংশ। এ কারণেই এই সফরটি রাজনৈতিক ভাবে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।