নিজস্ব প্রতিবেদক: গত দুই দিনে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার দীর্ঘ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকে জামায়াতের সঙ্গে নতুন করে ঐক্য করা হবে নাকি জামায়াত পৃথক অবস্থান থেকে আন্দোলন করবে-এ নিয়ে দীর্ঘ আলাপ আলোচনা হয়েছে বলে জানা যায়। তবে এই আলোচনা থেকে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়নি কোন পক্ষই। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এই বৈঠক আরও চলবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া ছাড়াও এই বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সংযুক্ত ছিলেন। এছাড়াও জামায়াতের আমির, মহাসচিব সহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাও সংযুক্ত হয়েছিলেন বলে জানা যায়।
গত মঙ্গলবার তারেক জিয়ার সঙ্গে জামায়াতের এই বৈঠক হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই বৈঠকের পরপরই গত বৃহস্পতিবার জামায়াত তাদের মজলিসের সূরার এক বৈঠক অনুষ্ঠান করে। সেই বৈঠকে বিএনপির সঙ্গে নতুন করে জোট করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। উল্লেখ্য, জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে তারেক জিয়ার এই বৈঠকে দুটি বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্রথম প্রস্তাবটি ছিল, জামায়াত এবং বিএনপি আবার প্রকাশ্যে ঐক্যবদ্ধ জোট করবে, যেমন জোট ছিল ২০০১ সাল থেকে। প্রথমে চার দলীয়, পরবর্তীতে ২০ দলীয় জোটে বিএনপি এবং জামায়াত ছিল প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল। কিন্তু ২০১৮ নির্বাচনের পর এই জোট অকার্যকর হয়ে পড়ে। এক সময় বিএনপি এবং জামায়াত দুজনই জোটকে নিষ্ক্রিয় করে।
ধারণা করা যায়, আন্তর্জাতিক চাপ এবং জনগণের মধ্যে নেতিবাচক ধারণার কারণেই বিএনপি প্রকাশ্যে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক করা থেকে সরে আসে। এ নিয়ে জামায়াতের মধ্যে অভিমান ছিল এবং জামায়াতের নেতারা এক সময় পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে, বিএনপির সঙ্গে তাদের এখন আর কোন জোট নেই। কিন্তু ২০২৩ সালের শেষ দিকে আবার বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। এখন সেই সম্পর্ক আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। জামায়াত এবং বিএনপি অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখন জামায়াত আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে। তাই বিএনপিও জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্য ঐক্য করতে আগ্রহী।’
মঙ্গলবারের বৈঠকে জামায়াতের নেতারা প্রকাশ্যে জোটের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বিএনপিসহ অতীতের ২০ দলীয় জোটকে আবার পুনর্জীবিত করার প্রস্তাবনা দিয়েছে। জামায়াত এটিকে আদর্শিক জোট হিসাবে অভিহিত করতে চাইছে। এই বৈঠকে জামায়াতের নেতারা দাবি করেছেন, এখন ভারতের কর্তৃত্ব বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর ভারতের এই কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তাদের ভাষায় বিএনপি এবং জামায়াতের ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।
জামায়াতের প্রধান লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে ভারত বিরোধী রাজনীতিকে আবার পুনর্জীবিত করা। সে কারণে জামায়াত ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কথা বলছে। তবে লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া এবং বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাস যুগপৎ আন্দোলনের পক্ষে বলে জানা গেছে। তারা জামায়াতের সঙ্গে অভিন্ন ইস্যুতে যুগপৎ ভাবে আপাতত আন্দোলন গড়ে তুলতে আগ্রহী। ভবিষ্যতে সময় সুযোগ বুঝে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রস্তাব দিয়েছে। এ নিয়ে ভবিষ্যতে আরও আলোচনা হবে। দুই পক্ষই তাদের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি এবং পাল্টা যুক্তি দেখিয়েছেন। তবে জামায়াত মনে করছে, বিএনপির এখন একক ভাবে আন্দোলন করার শক্তি নেই। আর জামায়াত যুগপৎ আন্দোলনেও আগ্রহী না। তারা মনে করছে, একমাত্র ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই সরকারের বিরুদ্ধে একটি চাপ তৈরি করছে পারে।’