
নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বাংলাদেশে ইসলামী ধারার দুটি রাজনৈতিক দল। তবে একই ধারার রাজনীতিতে মাঠে থাকলেও নিজেদের মধ্যে সবসময় দূরত্ব রেখে চলেছে দুটি দল। তবে এবার নতুন বার্তা আসছে দল দুটির পক্ষ থেকে।
আজ মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি)। সকালে বরিশালে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে অংশ নিতে বরিশাল যান দলটির আমির শফিকুর রহমান। বরিশালে এসে দুপুরে চরমোনাই পীরের দরবারে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। পরে তিনি চরমোনাই পীরের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিয়েছেন।
কর্মী সম্মেলনে যোগদানের আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বরিশাল সদরে চরমোনাই পীরের দরবারে যান। সেখানে তিনি মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তাঁরা রাজনৈতিক নানা বিষয়ে কথা বলেন। পরে দুই দলের নেতা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
দেশের রাজনীতিতে ইসলামপন্থী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ পরস্পরবিরোধী অবস্থানে থাকলেও নতুন পরিস্থিতিতে জামাত আমিরের বরিশাল ভ্রমণকে দুটি দলের মধ্যে দূরত্ব ঘোচার আভাস হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
ইসলামী যুব আন্দোলনের বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি এইচ এম সানাউল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, রাজনীতিতে দুই দল এত দিন পরস্পরবিরোধী থাকলেও এখন অনেক বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করছে। এটা দুই দলের ঐক্যের সূচনা পর্ব বলতে পারেন। এরই ধারাবাহিকতায় এই প্রথম জামায়াতের কোনো আমির চরমোনাই পীরের দরবারে এলেন এবং দলীয় প্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিলেন।
ইসলামী দলগুলোর ঐক্য বা জোট হচ্ছে কি না গণমাধ্যমের এমন প্রশ্নের জবাবে দুই দলের আমির ঐক্যের জন্য জনসাধারণের কাছে দোয়া চান। তাঁরা বলেন, ইসলামী দলগুলো ভোটকেন্দ্রে একটি বাক্স পাঠানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা মূলত ইসলামি দলগুলোর মধ্যে ঐক্য দেখতে চাই। আমাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি দিয়ে আর কোনো প্রহসনের নির্বাচন হতে দেব না। তাই যথাযথ সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষে নির্বাচন দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে শতকরা ৯১ জন নিজেকে মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বাকি ৯ ভাগের মধ্যে কিছু ভিন্ন ধর্মাবলম্বী। সব মিলিয়ে, এই বাংলাদেশ আমাদের। আমাদের মিলনমেলা আল্লাহর জন্য। এই মিলন রাজনীতির মাঠেও থাকবে। আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। জনগণের প্রত্যাশা, নির্বাচনের সব কেন্দ্রে ইসলামি দলগুলোর যেন একটি বাক্স থাকে।’
ভারত ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আমির বলেন, ‘ভারত আমাদের প্রতিবেশী। আমরা ভারতের কাছ থেকে আশা করি, কাঁটাতারের বেড়া যেন না থাকে। এটি আমাদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে হয়েছে।’ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই দ্রব্যমূল্য দ্রুত কমে আসুক। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।’
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘নির্বাচনের সময় ইসলামের পক্ষে একটি বাক্স কেন্দ্রে পাঠানোর প্রচেষ্টা আগেও ছিল, এখনো চলছে। বিভিন্ন কৌশলে গত ৫৩ বছর ইসলামি দলগুলোকে দূরে রাখা হয়েছে। ৫ আগস্ট নতুন স্বাধীনতার মাধ্যমে ইসলামি পক্ষের জন্য একটি ভালো ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তবে যদি আমরা সময়োপযোগী বিচার না করি, তা আমাদের জন্য অকল্যাণকর হতে পারে।’