নিজস্ব প্রতিবেদক: জামায়াতকে নিয়ে নতুন বিরোধের মুখোমুখি হচ্ছে বিএনপি। স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের এই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিএনপির ভেতরে যেমন শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব অন্তঃকলহ তেমনই বিএনপি যাদের সঙ্গে নির্বাচন প্রতিরোধের আন্দোলন করেছিল তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মতদ্বৈততা। বিএনপির নেতৃত্বের একটি বড় অংশ জামায়াতকে নিয়ে আবার প্রকাশ্য আন্দোলনের পক্ষে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভাতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল এবং সেই বৈঠকে মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সহ স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্য জোটের ব্যাপারে তাদের ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছেন।
তারা বলছেন যে, জামায়াত এবং বিএনপি একসাথে জোট অনেকটাই অর্থবহ ছিল এবং এটির ফলে জনসমর্থনের দিক থেকেও তারা একটি আস্থাশীল অবস্থার মধ্যে পৌঁছেছিলেন। কিন্তু ২০১৮ নির্বাচনের পরে আন্তর্জাতিক চাপে জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় বিএনপির। জামায়াত-বিএনপির ২০ দলীয় জোট কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে। এখন আবার নতুন করে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির গাঁটছড়া বাঁধতে চাইছে। এর পিছনে অন্যতম কারণ হল ভারত বিরোধিতা।’
বিএনপির নেতা যারা জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্যে ঐক্য গড়ার পক্ষে, তারা বলছেন যে, ভারত বিরোধিতার রাজনীতি যদি করতে হয় তাহলে অবশ্যই জামায়াতকে পাশে নিতে হবে। অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতৃবৃন্দ জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্য ঐক্যের বিরোধী। তারা বলছেন যে, এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক অবস্থা মনোভাব তৈরি হবে। বিএনপির মহাসচিব এটাও মনে করেন যে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সমর্থন ছাড়া বিএনপির পক্ষে কখনোই মাথা তুলে দাঁড়ানো সম্ভব না। আর এই কারণেই জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্য করা হবে আত্মঘাতী।
জামায়াতের সাথে ঐক্যের বিষয়টি নিয়ে এখন বিএনপির ঐক্যের মধ্যেও এক ধরনের টানাপোড়েন এবং বিভক্তি তৈরি হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলন করছিল, সেই সমস্ত আন্দোলনকারী দলগুলোর মধ্যেও এ নিয়ে এক ধরনের বিভক্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করছে যদি জামায়াতকে নিয়ে আন্দোলন করা যায় তাহলে আন্দোলনের গতি হবে এবং শক্তিশালী হবে। অন্যদিকে জেএসডি, নাগরিক ঐক্য সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে যে, জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যের কোন প্রয়োজন নেই এবং এই ধরনের ঐক্য হলে সেটা হবে আত্মঘাতী।’
গতকাল ১২ দলীয় জোট এবং এলডিপির সঙ্গে বিএনপি বৈঠক করে। এই বৈঠকে জামায়াত প্রসঙ্গটি সামনে এসেছে। ১২ দলীয় জোটের মধ্যে থেকে অনেকেই জামায়াতের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করার জন্য দাবি তুলেছেন। তারা বলেছেন যে, জামায়াতকে ছাড়া জোটে যে অন্যান্য দলগুলো আছে সেগুলো শক্তিশালী নয়। এবং আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য যে কর্মী সমর্থক এবং কৌশলগত অবস্থান সেটি তৈরি করতে পারে না। এ কারণেই তারা জামায়াতকে পাশে পেতে চায়। তবে অন্যান্য রাজনৈতিক দল যারা বিএনপির সঙ্গে অভিন্ন ইস্যুটিতে আন্দোলন করছে তারা মনে করছে যে, জামায়াতকে প্রকাশ্য রাজনীতি করতে দেওয়া এখন উচিত না। এ নিয়ে এখনো দ্বন্দ্ব রয়েছে।
তবে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, ধাপে ধাপে তারা সমমনা সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার বৈঠক করবে এবং এই সমস্ত বৈঠকের মধ্য দিয়ে তারা একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসবে। ‘