নিজস্ব প্রতিবেদক: বেনাপোলের ধান্যখোলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীনের মরদেহ তার নিজ গ্রামে দাফন করা হয়েছে। বুধবার (২৪ জানুয়ারি’) বাদ মাগরিব জানাজা শেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের সাহাপাড়া এলাকার শ্যামপুর গ্রামের ভবানীপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে বিজিবির সিপাহী মোহাম্মদ রইশুদ্দীনের মরদেহ বিকেল সোয়া ৪টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা স্টেডিয়ামে বিজিবির হেলিকাপ্টারে করে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে কড়া নিরাপত্তায় আম্বুলেন্সে করে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। সন্ধ্যায় রইশুদ্দীনের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। চোখের জলে সহকর্মী ও স্বজনরা তাকে শেষ বিদায় জানান। তার অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
রইশুদ্দীনের প্রতিবেশী ফরহাদ জানান, সন্ধ্যায় রইশুদ্দীনের মরদেহ বাড়িতে আনা হয়। মাগরিবের নামাজের পর সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে শ্যামপুরের ভবানীপুর কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
নিহত মোহাম্মদ রইশুদ্দীন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের সাহাপাড়া এলাকার শ্যামপুর গ্রামের মো. কামরুজ্জামানের ছেলে। তিনি বিজিবির যশোর ব্যাটালিয়নের ধান্যখোলা বিওপিতে সিপাহি পদে কর্মরত ছিলেন। রইশুদ্দীনের আড়াই বছর বয়সী মেয়ে ও ৪ মাস বয়সী ছেলে সন্তান রয়েছে।
গত সোমবার (২২ জানুয়ারি’) রাতে বিজিবির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানানো হয়, ২২ জানুয়ারি আনুমানিক ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বিজিবি ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্ট সংলগ্ন এলাকায় ভারত থেকে আসা একদল গরু চোরাকারবারিকে সীমান্ত অতিক্রম করে আসতে দেখে দায়িত্বরত বিজিবি টহল দল তাদের চ্যালেঞ্জ করলে তারা দৌড়ে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বিজিবির সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীন চোরাকারবারিদের পেছনে ধাওয়া করতে করতে ঘন কুয়াশার কারণে দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। প্রথমে তাকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায় তিনি বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের অভ্যন্তরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঘটনার পরপরই এ বিষয়ে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক করা হয়। পরে জানা যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোহাম্মদ রইশুদ্দীন মারা গেছেন।
নিহত রইশুদ্দীনর স্ত্রী মোছা. নাসরিন বলেন, আমার স্বামীর সঙ্গে রোববার রাতে সর্বশেষ কথা বলেছি। সোমবার কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। এরপর সারা দিন যাওয়ার পর মঙ্গলবার সকালে মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি আমার স্বামী আহত হয়েছেন কিন্তু পরে জানতে পারি তিনি মারা গেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার ছোট ছোট দুইটা সন্তান আছে। আমার তো আর স্বামী বেঁচে নেই, আমি এখন কীভাবে চলবো। বাচ্চা দুইটাকে কীভাবে মানুষ করবো? আমার স্বামী থাকলে আমাকে সব করে দিত। সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি আমার ছেলেমেয়েকে মানুষ করার দায়িত্ব যেন তারা নেয়।’
চরতারাপুর মহাবিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক মোহাম্মদ আলী বলেন, মোহাম্মদ রইশুদ্দীন ২০১৩ সালে চরতারাপুর মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাস করে। এরপর ২০১৫ সালে বিজিবিতে যোগ দেয়। তার মৃত্যুর খবরে আমরা মর্মাহত। তার দুটি ছোট ছোট সন্তান আছে। সন্তান দুটির জন্য সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তার আবেদন জানাই।
মনাকষা ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য শাহনাজ পারভীন লিলি বেগম বলেন, নিহত মোহাম্মদ রইশুদ্দীনের মেয়ের বয়স আড়াই বছর আর ছেলের বয়স ৪ মাস। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, তারা যেন পরিবারটির পাশে দাঁড়ায়।’