নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে যাচ্ছেন। নানা কারণে এই চীন সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যতিক্রমী একটি রাষ্ট্র, যারা চীন এবং ভারতের সঙ্গে সমান্তরালভাবে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। গত এক যুগে দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্কের পরিধি উত্তরোত্তর বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন যে, সকলের সাথে বন্ধুত্ব এবং কারও সাথে বৈরিতা নয়, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির এই মৌলিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই বাংলাদেশ সকল দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করার নীতিতে অটল রয়েছে।
তিনি এটাও বলেছেন যে, ভারত বাংলাদেশের দুর্দিনের বন্ধু। আর চীন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীন অংশীদার। এই দুটি সঙ্গে সম্পর্ক যে বাংলাদেশের সবচেয়ে উষ্ণ, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রেক্ষিতে দুবার সফর করেছেন। তার প্রথম ভারত সফর ছিল শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য। আর দ্বিতীয় সফরে তিনি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জন্য যেমন এটি ছিল প্রথম একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক, তেমনই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ১১ই জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর করেন ভারতে। কাজেই ভারত যে বাংলাদেশের প্রথম বন্ধু এই সফরের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে’।
অন্যদিকে চীন যে বাংলাদেশের প্রধান অর্থনৈতিক পার্টনার সেটি প্রমাণের জন্য আগামী ৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে যাচ্ছেন। এই সফরে প্রায় ৭০০ বিলিয়ন ডলারের আথিক সহায়তা নেবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্কের আড়ালে কি চীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জড়াচ্ছে কি না সেই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে উঠেছে।
বিগত নির্বাচনের সময় থেকেই চীনকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়ে আগ্রহী দেখা যাচ্ছে এবং চীন নীরবতা ভঙ্গ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়ে নানা রকম বক্তব্য এবং মতামত দিচ্ছে। বিগত নির্বাচনের সময় যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের উপর জোর দিয়েছিল। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকারের উপর রীতিমতো চাপ দিয়েছিল, তখন চীন বাংলাদেশের পাশে ছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে নতুন সরকার গঠিত হবার পর চীনের বাংলাদেশে তৎপরতা অনেক গুণ বেড়েছে। চীনা দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতকে ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে তিনি সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। চীনে আমন্ত্রিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। দুই দফায় আওয়ামী লীগের নেতারা চীন সফর করেছেন।
অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের পাশাপাশি চীন কি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও জড়াচ্ছে’? এই ব্যাপারে কূটনৈতিক মহলের ভিন্ন ভিন্ন ধরনের বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, চীন যেহেতু বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে, কাজেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সরকারের ধারাবাহিকতা চীনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ চীনের একটি বড় বাজার। আর এ কারণেই বাজারের নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য রাজনীতির ওপর তাদের কিছুটা নজর থাকাটা খুব একটা অস্বাভাবিক না। কারণ যে কোন সরকার পরিবর্তন হলে এই অর্থনৈতিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে যায়। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এরকম চিন্তা থেকেই চীন হয়তো বর্তমান সরকারকে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন দিচ্ছে। বিগত নির্বাচনের আগে যেটি দৃশ্যমান হয়েছে। এই নিরঙ্কুশ সমর্থন অব্যাহত রাখার জন্যই হয়তো প্রধানমন্ত্রীর সফরকে চীন এত গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে মনে করেন কোন কোন কূটনৈতিক।
তবে এর বিপরীতে ভিন্ন মতও রয়েছে। অনেক কূটনীতিকই মনে করেন যে, এই উপমহাদেশকে ঘিরে চীনের একটি রাজনৈতিক পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষ করে ভারতকে কোণঠাসা করার জন্য চীনের যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে মালদ্বীপ, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছে চীন। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত চীনকে এরকম আগ্রাসী না দেখা গেলেও রাজনৈতিক মনস্কতা চীনের যে বেড়েছে সেটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। চীনা দূতাবাসগুলোতে এখন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আনাগোনা চলছে।’
শুধু আওয়ামী লীগ নয়, ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে চীন যেমন ঘনিষ্ঠতা করছে, তেমনই বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক রক্ষার নীতি অনুসরণ করে চলছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই বোঝা যাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীন কতটুকু প্রভাব বিস্তার করছে।’