নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে অংশ নিতে শুরু করেছেন। তিন মাস আত্মগোপনে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছেন, তখনো নতুনভাবে গ্রেপ্তারের ভয়ে আছেন তারা।
বিএনপির অভিযোগ, গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আবারও নতুনভাবে ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় পুরোনো মামলায় নতুনভাবে আসামি দেখিয়ে আটকের ঘটনা ঘটছে। এমন অবস্থায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ভয়ভীতির মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন। গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেকেই ঘরবাড়ি কিংবা এলাকা ছাড়া।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি’) দ্বাদশ সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিন প্রতিবাদ হিসেবে কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি। তারও আগে ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি মহানগর ও জেলা পর্যায়ে একই কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। কিন্তু পুলিশ মঙ্গলবার রাজধানীতে কোথাও কালো পতাকা মিছিল করতে দেয়নি বলে বিএনপির অভিযোগ। বরং ওইদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুনভাবে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নতুনভাবে দায়েরকৃত ছয়টি মামলায় ৪৫৬ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। ৭০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ওইদিন রাজধানীর উত্তরায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে এবং ধাক্কা দিয়ে জিপে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। যদিও তাকে পরবর্তী সময়ে পুলিশ ছেড়ে দেয়। সে সময় মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদসহ সংগঠনের ৪ নেত্রীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই দিনে বাগেরহাটের রামপালে বিএনপির কালো পতাকা মিছিল থেকে দলটির কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনিও কিছুদিন আগেই মুক্তি পেয়েছিলেন।’
বিএনপির অভিযোগ, গত বছরের ২৮ অক্টোবরের পর বিরোধীদের মাঠে দাঁড়াতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নেতাকর্মীদের যাকে যেখানে পেয়েছে, গ্রেপ্তার করেছে। এখনো বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তল্লাশির নামে হামলা চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আকবর হোসেন এবং তার পুত্র সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন রনির বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পুলিশ পরিচয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। ওই পরিবারের অভিযোগ, এ সময় বাড়ির লোকজনদের সঙ্গে অশালীন আচরণ ও ‘লুটপাট’ করা হয়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বন্দুকের নলে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর সরকারের তথাকথিত মন্ত্রি-এমপিরা এখন আরও বেসামাল কথাবার্তা বলছেন। অবৈধ সরকার বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে লেলিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি বিএনপির পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ কালো পতাকা মিছিলে হামলা-নির্যাতন চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও বিরোধী নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে পুলিশ পরিচয়ে তল্লাশির নামে হামলা-ভাঙচুর করা হচ্ছে।’
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা ধীরে ধীরে মাঠের রাজনীতিতে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন। অনেকেই কারাগার থেকে ছাড়াও পেয়েছেন। হামলা-মামলা উপেক্ষা করে কৌশলে কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের তিন মাস পর গত ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকা ও জেলায় জেলায় কালো পতাকা মিছিলে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় অনেককে। তাদের এ উপস্থিতি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আশা জাগিয়েছে। আবারও রাজপথে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে সরকারবিরোধী দলগুলো। কিন্তু গত ৩০ জানুয়ারি সারা দেশে কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় অনেকের মধ্যে আবারও কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে পরবর্তী কর্মসূচি প্রণয়নে বিএনপি কিছুটা সময় নেবে।
বিএনপির দপ্তর সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যনুযায়ী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ৪-৫ দিন আগে থেকে অদ্যাবধি মোট গ্রেফতার হন ২৫ হাজার ৬৪৪ জনের বেশি নেতাকর্মী।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন গণমাধ্যমকে বলেন, একতরফা ডামি নির্বাচন করেও স্বস্তিতে নেই অবৈধ সরকার। তাদের সবসময় পতনের আতঙ্ক তাড়া করছে। এজন্যই বিএনপির শীর্ষ নেতাদের জামিন না দিয়ে দমন-পীড়ন অব্যাহত রেখেছে।’