আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী পদ্ধতিগত নির্যাতন ও দমনপীড়নের জন্য বেশ কুখ্যাত পরাশক্তি চীন। বিশেষ করে দেশটির পূর্ব তুর্কিস্তান তথা জিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসরত উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনা দমনপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার সারা বিশ্ব। যদিও তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই বেইজিংয়ের। এমনকি নিজ নিজ অর্থনৈতিক সুবিধার স্বার্থে এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ অধিকাংশ মুসলিম দেশ। তবে একই ভাষা ও জাতিগোষ্ঠী হওয়ার সুবাদে উইঘুর মুসলিমদের অধিকার নিয়ে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে তুরস্ক। বলা হচ্ছে প্রকাশ্যে না হলেও কূটনৈতিকভাবে উইঘুরদের স্বার্থ রক্ষায় নিজেদের চেষ্টা জারি রেখেছে আঙ্কারা।’
মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে চীন সফরে যান তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান। এ সময় তুর্কি ভাষাভাষী উইঘুরদের অধিকার ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য গোপনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও চালান তিনি। দুজন তুর্কি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এমন তথ্য জানায় সংবাদমাধ্যমটি।
বেইজিং সফরকালে হাকান ফিদান চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যাং ঝ্যাং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সফরকালে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিনজিয়াংয়ের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটিও ভ্রমণ করেন। ২০১২ সালের পর এটিকে উইঘুর অঞ্চলে সবচেয়ে গুরুত্বপর্ণ সফল বলে মনে করা হচ্ছে।
জিনজিয়াং সফরকালে ফিদান উরুমকি, কাশগার এবং উইঘুর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় ফিদান একটি ফিরোজা রঙের টাই পরেছিলেন, যা উইঘুর জাতীয় পতাকার সঙ্গে সম্পর্কিত। সফরে পূর্ব তুর্কিস্তানের শহরগুলোকে প্রাচীন তুর্কি-ইসলামিক শহর হিসেবে উল্লেখ করেন ফিদান, যা চীনকে তুর্কি ও ইসলামিক বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত করে। তবে এ সময় উইঘুর সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চীনের দমনপীড়ন ও পুনঃশিক্ষা ক্যাম্পে বিপুল পরিমাণ উইঘুর নারী-পুরুষকে আটক রাখার ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চুপ ছিলেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তুরস্কের দুটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, আঙ্কারা বেইজিংয়ের কাছে উইঘুর ইস্যুটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য জোর দিয়েছে। এ সময় তুর্কি কর্মকর্তারা চীনা কর্মকর্তাদের জানান, উইঘুর তুর্কিদের সাংস্কৃতিক অধিকার এবং মূল্যবোধ রক্ষার বিষয়টি তুর্কি বিশ্ব এবং ইসলামিক বিশ্বের সংবেদনশীলতার সঙ্গে সম্পর্কিত। সূত্রগুলো জানায়, আঙ্কারা চীনের ‘এক চীন’ নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। একইসঙ্গে উইঘুরদের অধিকার রক্ষার প্রতিও গুরুত্ব দেয়।
তুর্কি কর্মকর্তারা বেইজিংকে জানায়, উইঘুরদের সম্পর্কে তুরস্ক ও ইসলামি বিশ্বের উদ্বেগ দূর করা সকলের জন্যই মঙ্গলজনক হবে। এ ব্যাপারে একমাত্র চীনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তুর্কি কূটনীতিকরা। অবশ্য ফিদানের এমন কার্যক্রমে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছেন চীনা কর্তৃপক্ষ। জিনজিয়াংয়ের শহরগুলোকে তুর্কি ও ইসলামিক শহর বলে উল্লেখ করা চীনের দৃষ্টিভঙ্গির ঠিক উল্টো। তবে বিবৃতিতে ‘এক চীন’ নীতি ও চীনের অভ্যন্তরে কোনো প্রকার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রতি তুরস্কের বিরোধিতা দুই দেশের সম্পর্কে অনেকটাই ভারসাম্য এনে দিবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।’