নিজস্ব প্রতিবেদক: সারা দেশে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এই কোন্দল এখন সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। সারা দেশে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র বনাম নৌকার সমর্থকদের নির্বাচনোত্তর সংঘর্ষ কিছুতেই থামছে না। এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১৫ পেরিয়ে গেছে। আহত হয়েছে দুই হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যে শতাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছে। হামলা, লুট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে সাড়ে ৩০০। ইসিতে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫১ টি মামলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পর গত সোমবার ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ দলীয় কার্যালয়ে গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু এই আহ্বানের পরও তৃণমূলে আওয়ামী লীগের কোন্দল থামছে না। বরং আওয়ামী লীগের পরাজিত ব্যক্তিদের বক্তব্য নির্বাচনকে বিতর্কিত করছে এবং প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এই বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ সারা দেশে কোন্দল ঠেকানোর জন্য কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে যাচ্ছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে কোথায় কোথায় কোন্দল হচ্ছে এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের যারা সাংগঠনিক সম্পাদক আছে, তাদেরকে ইতোমধ্যেই বার্তা দেওয়া হয়েছে যেখানে যেখানে আওয়ামী লীগের কোন্দল হচ্ছে, সেই সমস্ত কোন্দল প্রবণ এলাকাগুলোতে সফর করার জন্য। এই সমস্ত বিবদমান পক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করার জন্য এবং যেকোন মূল্যে কোন্দল থামানোর জন্য নির্দেশনা দিতে। এরপর যদি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরবর্তী এই ধরনের কোন্দল এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটে, তাহলে যারা এই সমস্ত ঘটনার জন্য দায়ী থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শুধু সাংগঠনিক সম্পাদকরাই নয়, সাংগঠনিক সম্পাদকদের বাইরে প্রত্যেকটা বিভাগের জন্য একজন করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাজের তদারকি করবেন এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের দিয়ে একটি তালিকা প্রণয়ন করবেন, যে তালিকায় কারা কোথায় কোথায় কোন্দল এবং সহিংসতার ঘটনাগুলো ঘটছে তা খুঁজে বের করতে হবে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের ইতোমধ্যেই এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও আওয়ামী লীগের চারজন প্রেসিডিয়াম সদস্যকে বলা হয়েছে তারা যেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকরা সারা দেশে আওয়ামী লীগের যে বিভক্তি এবং অনৈক্য এটি নিয়ে কাজ করছেন সে ব্যাপারে যেন পরামর্শ দেন এবং নেতৃত্ব দেন। যে চারজন প্রেসিডিয়াম সদস্যকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, এবং কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত ফারুক খান।
তাদেরকে বলা হয়েছে কোথায় কোথায়, কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা এবং প্রয়োজনে বিবাদমান দুই পক্ষকে ডেকে একটি সমঝোতা করার চেষ্টা করতে হবে। এদিকে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলছেন, সামনে উপজেলা নির্বাচন। এখন যে বিরোধ এবং কোন্দল সেটি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে তা উপজেলা নির্বাচনের সময় আরও ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়বে। কারণ আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনও উন্মূক্ত ভাবে করার চিন্তা ভাবনা করছে। যদিও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।’
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে আসবে না। কাজেই উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার জন্য এটিকে উন্মূক্ত করে দেয়া দরকার। তবে আওয়ামী লীগের মধ্যে এই নিয়ে ভিন্ন মতও রয়েছে।’
আওয়ামী লীগ মনে করছে দলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং কোন্দল ঠেকানোর জন্য উপজেলা নির্বাচনে কঠোর হওয়া সরকার। উপজেলা যেহেতু স্থানীয় সরকার নির্বাচন সেখানে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও বহু উৎসাহিত ব্যক্তি অংশগ্রহণ করবে এবং নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এখন দেখার বিষয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল বন্ধে আওয়ামী লীগের উদ্যোগ কতটা সফল হয়।’