নিজস্ব প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে অসন্তোষ সৃষ্টির কারণে আলোচিত কেএনএফ। ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই প্রথম সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী এই সংগঠনটি আলোচনায় এসেছে। কেএনএফ কীভাবে তার ডালপালা বিস্তার করেছে এ নিয়ে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং গোয়েন্দারা ব্যাপক অনুসন্ধান চালাচ্ছে। চলছে বিভিন্ন রকমের তদন্ত। আর এই সমস্ত তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
কুকি-চিনের অর্থ উপার্জনের একটি বড় হাতিয়ার হল জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। বাংলাদেশের বিভিন্ন সশস্ত্র মৌলবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে কুকি-চিনের। এজন্য তারা জঙ্গিদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ গ্রহণ করছে। শুধু তাই নয়, এই জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের সঙ্গে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে রেখেছে কেএনএফ। কেএনএফ-এর সঙ্গে একাধিক সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠনের সম্পর্কের কথাও আজ উচ্চারিত হচ্ছে।’
একাধিক সূত্র বলছে, বাংলাদেশে যে সমস্ত মৌলবাদী ধর্মান্ধ সংগঠনগুলো রয়েছে যেমন-হিযবুত তাহরীর, মুজাহিদুল ইসলাম, আনসারুল ইসলাম সহ বিভিন্ন উগ্র মৌলবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে কুকি-চিনের কাছে যায় এবং তাদেরকে এই সমস্ত সংগঠনের কর্মীদেরকে কেএনএফ-এর প্রশিক্ষকরা প্রশিক্ষণ দেয় এবং এই প্রশিক্ষণের জন্য তারা মোটা অঙ্কের টাকা নেয়। টাকার বিনিময়ে বেশ কিছু জঙ্গিদেরকে তারা প্রশিক্ষণ দিয়েছে বলে তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। আবার এই সমস্ত জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। তাই শুধুমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামেই যে কেএনএফ-এর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই।
কেএনএফ-এর সারা বাংলাদেশে একটি জঙ্গি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেও অনেকে মনে করছে। এই কারণে সরকার কারা কারা কেএনএফ-এর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং কারা কারা কেএনএফ-এর সাথে সম্পর্কিত সে ব্যাপারে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছে।’
এর আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গভীর অরণ্যে কেএনএফ-এর আস্তানা থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণের সঙ্গে জড়িতদেরকে আটক করেছিল। তবে এটি একটি ঘটনা। এর বাইরেও বেশ কিছু জঙ্গিদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ঘটনা রয়েছে বলেও জানা গেছে।
বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, এটি হলো কেএনএফ-এর একটি অর্থ উপার্জনের মাধ্যম। এর মাধ্যমে তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে এবং যে অর্থ দিয়ে তারা অস্ত্র সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন রকম অপতৎপরতা চালায়। কেএনএফ-এর কেন্দ্রের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়া এই সমস্ত উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ সশস্ত্র সংগঠনগুলো কেএনএফ-এর নীতি এবং আদর্শ বিশ্বাস করে না। বরং তারা তাদেরকে গুরু মনে করে, প্রশিক্ষক মনে করে। আর এ কারণেই এই সমস্ত সংগঠনগুলো কেএনএফ-এর কথায় চলবে বা কেএনএফ তাদেরকে যে নির্দেশ দিবে সে অনুযায়ী তারা কাজ করবে এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই।
বিভিন্ন অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যে, কেএনএফ-এর কার্যক্রম মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামে বিস্তৃত এবং এই কার্যক্রমের প্রধান লক্ষ্য হলো চাঁদাবাজি, মানুষজনকে ভয় দেখানো এবং একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি পার্বত্য অঞ্চলে তৈরি করা। বিচ্ছিন্নবাদীর আন্দোলনের একটি চিন্তা থাকলেও কেএনএফ এখন পর্যন্ত সে রকম ভাবে প্রশিক্ষিত নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।’