নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শারীরিকভাবে তিনি বেশ অসুস্থ। চিকিৎসকরা বলেছেন, হৃদরোগের অসুস্থতা সহ তার আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে। এ অবস্থায় সার্বক্ষণিকভাবে রাজনৈতিক তৎপরতা চালানো তার পক্ষে অসম্ভব। এ বিষয়টি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের শীর্ষ নেতাদেরকেও জানিয়েছেন। তার একাধিক জটিল রোগ ক্রমশ জটিল হয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে তার পূর্ণকালীন বিশ্রাম দরকার বলেও চিকিৎসকরা কড়া সতর্কবার্তা তাকে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলে একজন নতুন মহাসচিব নিয়োগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। এবং এ পরামর্শ লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকেও দেয়া হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো বিএনপিতে এখন কেউই মহাসচিব হওয়ার দায়িত্ব নিতে রাজি নন।
উল্লেখ্য যে, ২৮ অক্টোবর মির্জা ফখরুল ইসলাম’ আলমগীর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ঐ দিন বিএনপির জনসভা থেকে সৃষ্ট তাণ্ডবের প্রেক্ষিতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে এবং সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় তিনি কারাভোগ করেছিলেন। এই সময় লন্ডন থেকে বলা হয়েছে যে, বিএনপিতে একজন নেতা গ্রেপ্তার হলে সাথে সাথে একজন ভারপ্রাপ্ত নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। সেই হিসেব থেকেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গ্রেপ্তারের পরপরই একজনকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এর দায়িত্ব দেয়ার কথা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাউকেই ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করা হয়নি। সাড়ে তিন মাস বিএনপি কোন মহাসচিব ছাড়াই চলেছে’।
অবশ্য এ সময় বিএনপির বিভিন্ন নেতাকে মহাসচিবের বদলে কাজ করতে দেখা গেছে। তবে সেই সমস্ত দায়িত্ব ছিল অনানুষ্ঠানিক। কিছুদিন নজরুল ইসলাম খান বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে মহাসচিবের মত দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তার আয়ু বেশি দিন ছিল না। তার পরপরই বিএনপিতে মহাসচিবের ভূমিকায় অঘোষিতভাবে অবতীর্ণ হয়েছিলেন মঈন খান। কিন্তু মঈন খানের সঙ্গে কর্মীদের দূরত্ব এতই যে, মঈন খান কর্মীদেরকে কোন আশা জাগাতে পারেনি। বরং তার ব্যাপ্তি সুশীল সমাজ এবং কূটনৈতিক পাড়ার মধ্যেই সীমিত। এ অবস্থায় এখন যদি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএপির মহাসচিবের মত দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করেন তাহলে বিএনপির মহাসচিব কে হবেন?
বিএনপিতে মহাসচিব হওয়ার মতো একাধিক ব্যক্তি রয়েছেন, কিন্তু এই মুহুর্তে কেউ এই দায়িত্ব নিতে রাজি নন। বিএনপির মহাসচিব হওয়ার ক্ষেত্রে যদি জ্যেষ্ঠতার বিবেচনা করা হয়, তাহলে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নাম আসে সবার আগে। কিন্তু খন্দকার মোশাররফ হোসেন এখন শারীরিকভাবে অসুস্থ। তিনি এ দায়িত্ব নিতে পারবেন না এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। এর পরে আসে বিএনপির আরেক সিনিয়র নেতা নজরুল ইসলাম খানের নাম। কিন্তু তিনিও লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার আস্থাভাজন নন বলেই অনেকে মনে করেন। মির্জা আব্বাসের নাম আলোচনায় আসলেও তিনি নিজেই মহাসচিব হতে আগ্রহী নন। কারণ তারও কিছু শারীরিক জটিলতা আছে বলে বিভিন্ন মহল মনে করেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে বিএনপি কখনোই মহাসচিব করবে না। কারণ বিএনপির মধ্যে একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আছে যারা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মত একজন সংখ্যালঘু ব্যক্তিকে মহাসচিব করার ব্যাপারে রাজী হবেন না। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অনেকের পছন্দের ব্যক্তি এবং দলের ভেতরেও তারা বেশ জনপ্রিয়। এ অবস্থায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সবচেয়ে ভালো বিকল্প হিসেবে আমীর খসরু মাহমুদকে মনে করা হয়। কিন্তু আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নানা মামলায় জর্জরিত এবং এই মুহুর্তে তিনিও মহাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করতে তেমন আগ্রহী নয় বলে জানা গেছে।
আর ড. মঈন খানের বিষয়টি হল তিনি একজন ভদ্রলোক, কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে তার খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা নেই। এছাড়া মহাসচিব হওয়ার মতো আছেন, রুহুল কবির রিজভী। কিন্তু লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার কাছে তিনি পছন্দের ব্যক্তি নন। ফলে বিএনপি এখন মহাসচিব করার মতো কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অসুস্থতা বিএনপিকে হয়তো আরেকটি নেতৃত্ব সঙ্কটে নিয়ে যেতে পারে।’