নিজস্ব প্রতিবেদক: কিশোরগঞ্জের নিকলীতে দামপাড়া ইউনিয়নের বাজার শাখার ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট আবুল কালাম আজাদ প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতারণায় টাকা হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা। আত্মসাতের বিষয়টি নজরে এলে আউটলেট শাখার কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া দামপাড়া বাজার শাখার সব কার্যক্রম নিকলী সদর শাখায় করার জন্য গ্রাহকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ডাচ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট আবুল কালাম দামপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। তিনি ‘বিকাশ’ এরও এজেন্ট। তার বিরুদ্ধে বিকাশের মাধ্যমে গ্রাহকদের পল্লী বিদ্যুতের বিল, শিক্ষা উপবৃত্তি, করোনাকালীন কৃষিতে কৃষকদের প্রণোদনার টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ও তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়, দামপাড়াবাজার শাখার এ এজেন্ট ব্যাংকটিতে গ্রাহকরা ডাচ্-বাংলার নির্ধারিত ক্যাশ মেমোতে বিভিন্ন অংকের স্থায়ী আমানত বা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন। ফিক্সড ডিপোজিট বা স্থায়ী আমানতের বিপরীতে গ্রাহকদের সরকারি তফসিলি ব্যাংকের নির্ধারিত সুদহারের চেয়ে বেশি ‘লভ্যাংশ’ দিয়ে আসছিল তারা। প্রথম দিকে কয়েক মাস ধরে গ্রাহকদের লভ্যাংশের টাকা মোবাইল মেসেজে ও নগদে ধারাবাহিকভাবে প্রদান করে আসছিল।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হঠাৎ দামপাড়া আউটলেট থেকে গ্রাহকদের মোবাইল মেসেজে ও নগদে লভ্যাংশ প্রদান বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিষয়টি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানতে পেরে শাখাটি তালাবদ্ধ করে দেয়। সেই থেকে আমানতকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ দেখা দেয়।
এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে তখন আবুল কালাম গ্রাহকদের লাভসহ টাকার ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। গ্রাহকদের টাকা ফেরতের নিশ্চয়তা স্বরূপ নির্ধারিত টাকা উল্লেখসহ অগ্রণী ব্যাংক নিকলী উপজেলা শাখার অগ্রীম চেক দেন।
বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে গুঞ্জন তৈরি হলে আবুল কালাম গ্রাহকদের বলেন, কোনো আইনি পদক্ষেপ নিলে বা সাংবাদিকদের জানালে তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে না।’
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি’) লাভ সহ টাকা ফেরত দেয়ার দিন ঠিক করে এজেন্ট আবুল কালাম আজাদ আত্মগোপন করেন। অনেকে আশঙ্কা করছেন কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করে আবুল কালাম বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
গ্রাহক রাধানাথ মল্লিক এবং তরিকুল ইসলাম বলেন, জমার রশিদ সকল গ্রাহকদের কাছ থেকে এজেন্ট আবুল কালাম আজাদ নিয়ে যায় তাই প্রমাণের কারণে আমরা মামলা করতে পারছি না। টাকার মানি রিসিট দেয়া হলেও সে টাকা ব্যাংকে জমা দেয় নাই।
হোমিও চিকিৎসক প্রশান্ত কুমার পাল, স্বর্ণকার মন্টু রায়, রাধানাথ, যমুনা খাতুনসহ আরও অনেক গ্রাহক জানান, আবুল কালামের আশ্বাস ও হুমকির কারনে ভূক্তভোগীরা কোন অভিযোগ বা মামলা করেননি। সাংবাদিকদেরও বিষয়টি জানাননি।১১ শতাংশ সুদের প্রলোভন দেখালে তারা সেখানে টাকা সঞ্চয় করেন।
গত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি’) লাভসহ টাকা ফেরত দেওয়ার তারিখ দিয়ে আবুল কালাম আজাদ উধাও হয়ে যান। ফেরতের নাম করে টাকা জমার সব রসিদও নিয়ে রেখেছিলেন। যে কারণে এখন মামলা করার মতো তথ্যপ্রমাণও তাদের হাতে নেই। সারাজীবনের সঞ্চয় হারিয়ে অনেকেই দিশেহারা।
কারপাশা ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামের প্রশান্ত কুমার পাল সজল জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে সোনালী ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করে ১৫ লাখ টাকা জমিয়েছিলেন। আবুল কালামের মিষ্টি কথায় পড়ে এ টাকা তুলে বেশি লাভের আশায় ডাচ্-বাংলায় রেখেছিলেন। সারাজীবনের কষ্টার্জিত টাকা নিরাপদের জন্য এ ব্যাংকে রেখেছিলেন। কালাম গা ঢাকা দেওয়ার খবর পেয়ে তিনি এখন পাগলপ্রায়।
এ ছাড়াও অনেক গ্রাহক লাখ লাখ টাকা হারিয়ে এখন দিশাহারা। এ ব্যাপারে এজেন্ট আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ফরিদ হোসেন জানান, তারা অনুসন্ধান করে ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছেন। এর বাইরে আরও টাকা আত্মসাৎ হয়ে থাকলে এর কোনো প্রমাণ তাদের কাছে নেই। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে গত (সোমবার’) ২২ জানুয়ারি আদালতে মামলা করেছেন। আদালত নিকলী থানার ওসিকে এফআইআর করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে আদেশের কাগজপত্র এখনো থানায় যায়নি বলে জানা গেছে।
নিকলী থানার ওসি এস এম শাহাদাত হোসেন বলেন,এ ঘটনায় অভিযোগ বা মামলার নথি এখনো পাই নি।পেলে আইনগত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’