নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্পদের তথ্য গোপনসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মিহির কুমার ঘোষ ও তার স্ত্রী শিল্পী রানী ঘোষের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার দুপুরে দুদকের সমন্বিত কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ে উপ-সহকারী পরিচালক মো. ইমরান খান তাদের নামে পৃথক দুটি মামলা করেন। মামলার আসামি শিল্পী রাণী ঘোষ (৪২) ও তার স্বামী মিহির কুমার ঘোষ (৫১)। তারা জেলা শহরের টি.এ. রোড মৌড়াইলের বাসিন্দা।
মিহির ঘোষ জেলার নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সাবেক অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ছিলেন। বর্তমানে একই পদে বিজয়নগরে কর্মরত রয়েছেন। একটি মামলায় মিহিরকে এবং অপর মামলায় স্ত্রী শিল্পী ও তার সহযোগী মিহিরকে আসামি করা হয়।
দুদক কুমিল্লার উপ-পরিচালক মো. ফজলুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মিহির ঘোষের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় ও তার স্ত্রী শিল্পী ঘোষের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় মামলা করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে মিহির ঘোষ গণমাধ্যমকে বলেন, দুদকের মামলার বিষয়ে তিনি অবগত নন।
শিল্পী ও মিহিরের মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে দুদক অনুসন্ধান শেষে শিল্পী রাণী ঘোষ ও তার স্বামী মিহির কুমার ঘোষের বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য পায়। দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬ (১) ধারামতে ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট স্বপ্না রানীর কাছে সম্পদ বিবরণী নোটিশ ও ফরম জারি করে দুদক। ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দুদকের কুমিল্লার সমন্বিত কার্যালয়ে সম্পদ বিবরণী ফরম পূরণ করে পাঠান শিল্পী।
শিল্পী রানী দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে তার ৩৬ লাখ ৬৬ হাজার ৭৮২ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১৫ লাখ ৬৮ হাজার ৪১ টাকার অস্থাবর সম্পদের কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তার নামে ৩৯ লাখ ৫৬ হাজার ২৬ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ১৫ লাখ ৬৮ হাজার ৪১ টাকার অস্থাবর সম্পাদ অর্জনের তথ্য পায় দুদক। পারিবারিকসহ অন্যান্য ব্যয় পাওয়া যায় ৮ লাখ ২৬ হাজার ২৯১ টাকা। পারিবারিক ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদসহ তার নামে মোট ৬৩ লাখ ৫০ হাজার ৩৫৮ টাকার সম্পদ পায় দুদক। তিনি ২০১০-১১ করবর্ষে আয়কর নথি খোলেন। সে সময় গৃহ সম্পদ ও ব্যবসা থেকে তার আয় ছিল ৩৪ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৯ টাকা।’
এতে শিল্পীর জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সম্পদের তারতম্য পাওয়া যায়। তার জ্ঞাত-আয় বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ২৮ লাখ ৭৪ হাজার ৫৩৯ টাকা। তিনি সম্পদ বিবরণীতে ৫২ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৩ টাকার সম্পদ উল্লেখ করলেও দুদক অনুসন্ধানে পায় ৫৫ লাখ ২৪ হাজার ৬৭ টাকা। শিল্পী সম্পদ বিবরণীতে ২ লাখ ৮৯ হাজার ২৪৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।
২০১০-১১ সালের আয়কর নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঐ আয়বর্ষে ব্যবসা থেকে শিল্পী আয় দেখান ৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। কিন্তু সেসময় ব্যবসার পুঁজি দেখান মাত্র ২ হাজার টাকা। এতে বোঝা যায়, আয়কর নথি খোলার পূর্বে তার নামে কোনো ব্যবসা ছিল না। তার স্বামী মিহির কুমার অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থ দিয়ে ২০১০-১১ সালে পাঁচ তলাবিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণ করেন।
সম্পদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে শিল্পী স্বামী মিহিরের সহায়তায় অসৎ উদ্দেশ্যে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তযোগ্য অপরাধ করেছেন। মিহির কুমার ঘোষ (৫১) দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা হিসাব/তথ্য প্রদানসহ ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৭২২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় শাস্তিযাগ্য অপরাধ করেছেন।’