ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: নিউ স্ট্যান্ডার্ড ফাইনান্স এন্ড কমার্স এমসিএস লি: এর নাম ভাঙিয়ে ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎকারী মহাপ্রতারক মোবারক হোসেন এখনো রয়েছে বহাল তবিয়তে। প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় ইতোমধ্যে জনৈক গ্রাহকের দেওয়া বনানী থানার মামলায় চিহ্নিত প্রতারক মোবারক হোসেন এর নামে ওয়ারেন্ট ইস্যূ হলেও সে রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এদিকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শত-শত গ্রাহক তাদের টাকা ফিরে পেতে হন্যে হয়ে খুঁজছে। অপরদিকে এই প্রতারণার বিষয়টি জেনে সচেতন মহল বলেছে, পুলিশ প্রশাসনের উচিৎ মোবারকের মোবাইল ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশী হেফাজতে নেওয়া। তা না হলে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের সামনে মোবারক পড়ে গেলে ঘটে যেতে পারে বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা। ঘটতে পারে গণধোলাই বা প্রাণহানীর মতো নির্মম ঘটনা বলে আশঙ্কা করছেন অভিজ্ঞ জনেরা।
জানাগেছে, নিউ স্ট্যান্ডার্ড ফাইনান্স এন্ড কমার্স এমসিএস লি: ও ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল সহ মোট ১৫ টি ভুয়া সমিতি ও মাল্টিপারপাস খুলে লোন দেওয়ার নাম করে মোবারক হোসেন ও তার দলবল সাধারণ ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদের কাছ থেকে লুটে নিয়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা। এই মোবারক হোসেন থাকেন ধানমন্ডিতে। আর প্রতারণামূলক ধান্ধা চালাচ্ছেন রাজধানির বনানী ও পল্টন থেকে। পাশাপাশি সুনামগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের উকিলপাড়াসহ রংপুর ও ময়মনসিংহ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তার এই ভূয়া মাল্টিপারপাস অফিস খোলা আছে।
এই প্রতারক মোবারক হোসেনের ভোটার আইডি কার্ড নং ৩৭১৯৪৫৮৬৩৪, জন্ম তারিখ ২৬শে নভেম্বর ১৯৭৯, পিতার নাম: আব্দুল আজিজ ভুইয়া, মায়ের নাম মোছা: ছালেহা বেগম।
তার প্রতারনার হাতেখড়ি হয় ব্রাহ্মণবাড়ীয়া থেকে। সেখান থেকে সে কোটি কেটি টাকা লুটে পালিয়ে যায় দুবাইতে। আর ওই ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত ঢুকতে পারেনি ব্রাহ্মণবাড়ীয়াতে। এই প্রতারনার জন্য তার বিরুদ্ধে দুদুকে ২০০ কোটি টাকার মামলা হয়। তদন্তে সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় দুদকের আবেদনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক তার বেশ কয়েকটি একাউন্ট জব্দ করে। যেগুলো এখনো ফ্রিজ হয়ে আছে। মামলা বিচারাধীন থাকায় সেই টাকা এখনো উদ্ধার করতে পারেনি প্রতারক মোবারক ।
বর্তমানে তার প্রতারনামূলক অফিসের বনানীর ঠিকানা: প্লট নং ৩১, রোড-০৬, ব্লক-সি, বনানী ঢাকা। সে বিভিন্ন কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর পরিচয় ব্যবহারের পাশাপাশি জাতীয় দৈনিক নবজীবন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক পরিচয় দিয়ে গাড়ীতে পত্রিকার স্টিকার লাগিয়ে বীরদর্পে দাপিয়ে বেড়ায় গোটা দেশে।
সর্বশেষ এই প্রতারক মোবারক হোসেন ১২, পুরানা পল্টন, এল মল্লিক কমপ্লেক্স (৮ম তলা) ঢাকা -১০০০ এই ঠিকানায় চোখ ধাঁধানো সাইনবোর্ড আর বিলাসবহুল ডেকোরেশনের অন্তরালে “ নিউ স্ট্যান্ডার্ড ফাইনান্স এন্ড কমার্স এমসিএস লি: নাম দিয়ে ব্যাংকের আদলে অফিস গড়ে তুলে প্রতারণার ব্যবসা পাকাপোক্ত করেছে। যদিও এই অফিস কখনো খোলা থাকেনা।
ইদানিং আবার প্রতারণার জাল বিস্তার করতে বেছে নিয়েছে নারায়ণগঞ্জ শহরকে। সেখানে একই আদলে উকিল পাড়ায় অফিস খুলে সাধারণ মানুষকে সর্বশান্ত করার মিশনে নেমেছে।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালসহ নামি দামি হোটেলে বিভিন্ন সভা সেমিনার ও আলোচনা সভা করে সাধারণ ব্যবসায়ীদের চোখ ধাঁদিয়ে প্রতারণার পথ প্রশস্ত করে এই মোবারক হোসেন চক্র। তার সার্বিক সহযোগিতায় ৫০/৬০ জন প্রতারক কাজ করে সারা দেশের বড় বড় বিভাগীয় শহর ও নামি দামি জেলাগুলোতে। লোন নিতে ইচ্ছুক ব্যবসায়ীদের অফিসে ডেকে তারা প্রথমে ১২শ টাকা জমা নিয়ে প্রথমে সদস্য করে। এরপর বলে প্রতি কোটি লোনের জন্য আপনার বইতে ২০ লাখ টাকা সঞ্চয় জমা থাকতে হবে। এছাড়া কেউ যদি জরুরী ভিত্তিতে লোন নিতে চায় তাহলে জরুরী ভিত্তির সার্ভিস চার্জ এর নাম করে আরও ১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এই মোবারক চক্র।
এসব টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর বাই রোটেশনে সবাই দু মাসের মধ্যে লোন পাবেন বলে আত্মগোপনে চলে যায়। আবার কখনো কখনো বিনা জামানতে ২ কোটি টাকা লোন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লোন পেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের কাছ থেকে ব্লাঙ্ক চেক হাতিয়ে নেয়। এরপর লোন প্রত্যাশী লোকজন লোনের জন্য ফোন দিলে মোবারক তাদের কে ব্রাকমেইলিং করতে থাকে। উল্টো লোন প্রত্যাশী ব্যক্তিদের সে বিভিন্ন ভাবে মোবাইলে ভয় দেখাতে থাকে যে আমার কাছে আপনার যে চেক জমা আছে তার প্রত্যেকটি চেকের অনুকূলে আমার ১০ লক্ষ টাকা করে পাওনা আছে। এসব কথা শুনে তখন লোন প্রত্যাশীরা বুঝতে পারে যে, তারা চিহ্নিত প্রতারক চক্রের পাল্লায় পড়েছে। তখন এদের মধ্যে অনেকেই প্রতারক মোবারক হোসেন নামে মামলা ও জিডি করলেও প্রতারক মোবারক থেকে যায় বহাল তবিয়তে। সপ্তায় সপ্তায় মাসে মাসে স্থান ও অফিস পরিবর্তন করে বলে থানা পুলিশও মোবারক সহ এই চক্রকে ট্রেস করতে হিমশিম খায়। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, সিলেট সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে বীরদর্পে এই চক্র তাদের প্রতারণার কার্যক্রম চালাতে থাকে ঠান্ডা মাথায়।
তাছাড়া এই প্রতারণামূলক কাজকে আরও ঝঞ্ঝাটমূক্ত করতে অফিসে টাঙিয়ে রাখেন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি। তাছাড়া স্থানিয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে কিছু পাতি নেতার ছত্রছায়ায় সে তার প্রতারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে।
মোবারক হোসেন এর ঢাকার আবাসিক ঠিকানা বনশ্রী ধানমন্ডি শংকরের কনকর্ড টাওয়ারে। সেখানেও তার ফ্লাটেও বেশ কিছু দ্বিতীয় শ্রেনীর মডেল ও কলগার্ল কে নিয়মিত আসাযাওয়া করতে দেখা যায়।
মহা প্রতারক মোবারক হোসেন আজ থেকে প্রায় দেড় বছর আগে এভাবে প্রতারনা করে ২০০ কোটি লুটে নিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সর্বশান্ত করে হুন্ডির মাধ্যমে সেসব টাকা পাচার করে দেয় দুবাইতে। বর্তমানে তার এসব প্রতারণার টাকায় দুবাইতে ব্যবসা চালু অবস্থায় আছে।
এদিকে বনানী থানার মামলায় গতমাসে প্রতারক মোবারক হোসেন এর নামে ওয়ারেন্ট ইস্যূ হলেও সে গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। তাই যেকোনো মূল্যের বিনিময়ে এই মহাপ্রতারক মোবারক হোসেন কে গ্রেফতার করতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা পুলিশ প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।