আপনার জানার ও বিনোদনের ঠিকানা

এমপি আনারকে হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন আটক গাড়ি চালক

নিউজ ডেস্ক: এমপি আনারকে হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন আটক গাড়ি চালক,ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা মামলায় আটক কলকাতার গাড়ি চালক জুবেইর ওরফে জিহাদ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। কীভাবে এই সংসদ সদস্যকে কলকাতার বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে হত্যা করা হয়েছে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সিআইডিকে দিয়েছেন তিনি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতার গাড়ি চালক জুবেইরকে বৃহস্পতিবার আটকের পর নিউ টাউন থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। এর আগে, বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ১৩ মে কলকাতায় নিখোঁজ হওয়া আনোয়ারুল আজীম আনারকে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে ঢাকায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আটক জুবেইর বাংলাদেশের নাগরিক বলেও সিআইডির একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যে সাতজনের নামে এফআইআর হয়েছে জুবেইর ওরফে জিহাদের নামও তার মধ্যে আছে। জিহাদ ছাড়া অন্য যাদের নাম এফআইআরে রয়েছে তারা হলেন, আখতারুজ্জামান শাহিন, আমানুল্লাহ, সিয়াম, মুস্তাফিজুর, ফয়সাল এবং শিলাস্তি রহমান। তাদের তিনজনকে ঢাকায় আটক করা হয়েছে বুধবার।

আজীমকে হত্যার পর লাশের টুকরা কোথায় ফেলে দেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে জানতে জুবেইর ওরফে জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু সেসব জায়গা এখনও চিহ্নিত করা যায়নি।’

পশ্চিমবঙ্গের তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলেছেন, আনার যে আবাসিক ভবনে খুন হয়েছেন সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছেন তারা। সেখানে অভিযুক্তদের বড় বড় ট্রলি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে। অভিযুক্তরা যখন ভবনটিতে প্রবেশ করেন, তখন তাদের সঙ্গে কোনও ব্যাগ ছিল না।

কলকাতা পুলিশের সূত্র বলেছে, বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হওয়া ওই তিন ব্যক্তি গত ৩০ এপ্রিল কলকাতায় পৌঁছান। পরে সেখানে পৌঁছে এক দালালের মাধ্যমে গাড়ি ভাড়া নেন তারা। ৩০ এপ্রিল থেকেই ভাড়ার ওই গাড়ি টানা ব্যবহার করা শুরু করেন ওই তিন বাংলাদেশি। গাড়ির চালককে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য মিলেছে। খুনের কয়েকদিন আগে ওই গাড়িতে করে শহরের বিভিন্ন শপিংমল, রিটেল স্টোরসহ একাধিক জায়গায় ঘোরাফেরা করেন তারা।

গাড়ি চালক জুবেইর জানিয়েছেন, ১৩ মে তার গাড়িতে করে আনোয়ারুল আজীম আনারকে বরানগর থেকে নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হয়। পরের দিন আলাদা আলাদা সময়ে ওই ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গাডিতে করে যান ওই তিন ব্যক্তি। পরে বাংলাদেশে ফেরেন তারা।

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, ওই ফ্ল্যাটের বেডরুমের খাটের কোণায় ও দরজার কাছে রক্তের দাগ পাওয়া গেছে। সেখানে জুতার ছাপও মিলেছে। ঘাতকরা পরিকল্পনা অনুযায়ী, আনোয়ারুল যাতে ধস্তাধস্তি করতে না পারেন সে জন্য তাকে খাটের কোনায় ফেলে শ্বাস রোধ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেন। সেই কারণে খাটের কোণায় রক্তের দাগ রয়েছে। এরপর সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়ায় রান্না ঘরে।

কলকাতা পুলিশ বলেছে, আনোয়ারুল আজীমের মরদেহ রান্না ঘরে নিয়ে টুকরা টুকরা করা হয়। তবে রান্নাঘরে রক্তের দাগ পাওয়া যায়নি। ব্লিসিং পাউডার ব্যবহার করে রান্নাঘর পরিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া খাটের নিচ থেকে হ্যান্ড গ্লাভসের প্যাকেট পাওয়া গেছে। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের সময় ওই ফ্ল্যাটে এমপি আনোয়ারুল আজীমসহ মোট ৭ জন ছিলেন।

হত্যার পর হাড়-মাংস আলাদা করে হলুদ মিশিয়ে ব্যাগে ভরা হয়

এদিকে, বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেছেন, ঢাকায় বসে ২/৩ মাস আগে আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ঢাকায় না পেরে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্যকে কৌশলে নেওয়া হয় কলকাতায়। সেখানে তাকে হত্যার পর শরীর টুকরা টুকরা করে হাড্ডি থেকে মাংস আলাদা করা হয়। এরপর হলুদ মিশিয়ে ব্যাগে ভরে ওই বাসা থেকে বের করা হয়। তবে কোথায় মরদেহের খণ্ডিত অংশ ফেলা হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ডিবি প্রধান বলেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার পরিকল্পনা হয় দুই থেকে তিন মাস আগে। তারা পরিকল্পনা করেছিল ঢাকায় হত্যা করবে। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের নজরদারি ও ঢাকায় হত্যাকাণ্ডের পরে সব হত্যার ক্লু পুলিশ বের করে নেবে বলেই হত্যাকারীরা কলকাতায় এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

হারুন অর রশীদ বলেন, অপরাধীরা বিদেশের মাটিতে অপরাধ করলে বাংলাদেশ পুলিশের নজরে আসবে না বলেই কলকাতা বেছে নেয়। বাংলাদেশের মাটিতে অপরাধ করার সাহস পায়নি। তবে তারা এ হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে থাকতে পারেনি। আমরা তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। আরও কয়েকজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’

তিনি বলেন, মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামানের বাসা একটি গুলশানে, একটি বসুন্ধরা এলাকায়। এই দুই বাসাতেই অনেকদিন ধরে পরিকল্পনা করেছে। আনারকে হত্যার নেপথ্যে রাজনীতি বা অর্থনৈতিক যে কারণেই থাকুক না কেন বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা কলকাতায় গত ২৫ তারিখ একটি বাসা ভাড়া নেয়। তারা ৩০ এপ্রিল ওই বাসায় ওঠে। যিনি হত্যার পরিকল্পনা করেছেন তিনিও আরেকজনসহ মোট তিনজন বিমানে করে কলকাতার ভাড়া বাসায় ওঠেন।

তারা দুই মাস ধরে খেয়াল রাখছে কখন আনারকে কলকাতায় আনা যাবে। সেখানে আরও দুজনকে হায়ার করা হয়। তারা ওই বাসায় আসা যাওয়া করবে। তারা হলেন, জিহাদ বা জাহিদ ও সিয়াম। মাস্টারমাইন্ড গাড়ি ঠিক করে। কাকে কত টাকা দিতে হবে। কারা কারা হত্যায় থাকবে, কার দায়িত্ব কী হবে। কিছু কাজ আছে বলে ৫/৬ জন রেখে ১০ মে বাংলাদেশে চলে আসেন আখতারুজ্জামান শাহীন

সৈয়দ আমানুল্লাহই শীর্ষ চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূইয়া

হারুন অর রশীদ বলেন, গত ১২ মে আনার তার ভারতীয় বন্ধু গোপালের বাসায় যান। ১৩ তারিখ ওই ভাড়া বাসায় ওঠেন। ফয়সাল নামে একজন তাকে রিসিভ করেন। সেখান থেকে নিয়ে যিনি মূল হত্যাকারী তিনি আনার ও ফয়সালকে নিয়ে গাড়িতে করে ওই বাসায় যান। আগে থেকে অবস্থান করা মোস্তাফিজও বাসায় ঢোকেন। সেখানে আগে থেকে ভেতরে ছিল জাহিদ, সিয়াম। আধা ঘণ্টার মধ্যে নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল আজীম গত ১২ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতায় তার পারিবারিক বন্ধু ও কলকাতার স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাসায় যান। পরের দিন, ১৩ মে চিকিৎসক দেখাতে হবে জানিয়ে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন আনোয়ারুল। সন্ধ্যায় ফিরবেন বলেও জানান তিনি। পরে বিধান পার্কের কাছে কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন তিনি’।

চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় আজিম তার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। পরে তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে বন্ধু গোপালকে ফোন না দেওয়ার জন্য বলেছিলেন। গত ১৫ মে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় এমপি আনোয়ারুল গোপালকে বলেন, তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন এবং ভিআইপিদের সাথে আছেন। তাকে ফোন করার দরকার নেই। একই বার্তা পাঠিয়ে দেন বাংলাদেশে তার ব্যক্তিগত সহকারী রউফের কাছেও।

১৭ মে আনোয়ারুলের পরিবার তার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে গোপালকে ফোন করেন। ওই সময় তারা গোপালকে বলেন, তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই দিনই ঢাকায় থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর থেকে এমপি আনোয়ারুলের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।’

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

বাঁশখালীতে দুই হাসপাতাল ও ডায়াগণস্টিক সেন্টার সিলগালা,গুনল দুই লক্ষাধিক জরিমানা

শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ চিকিৎসাসেবায় অনিয়মের অভিযোগে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে দুইটি বেসরকারী হাসপাতালকে মোট দুই লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা জরিমানা সহ সিলগালা ও দু’টি

‘রাজধানীতে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে মশার ঘনত্ব’

বাংলা পোর্টাল: রাজধানীতে গত ৪ মাসে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে মশার ঘনত্ব। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকার উত্তরা আর দক্ষিণখানে। এখানের প্রতিটি ড্রেনে ভাসছে লার্ভা, পচা

‘চুক্তি পেতে চার সচিবের দৌড়ঝাঁপ’

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকা দুইজন সচিব এবং চাকরির মেয়াদ প্রায় শেষ হওয়া দুই সচিব মোট চারজন সচিব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে মরিয়া তৎপরতা চালাচ্ছেন। তারা

লেবাননে হাসপাতালের বাইরে ইসরায়েলি হামলা, আহত ১০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দক্ষিণ লেবাননের একটি হাসপাতালের বাইরে ইসরায়েলি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নিহত হয়েছে একজন এবং আহত হয়েছে আরও ১০ জন। লেবানিজ সরকারি গণমাধ্যম

হত্যা ও ডাকাতি মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: হত্যা ও ডাকাতি মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১২ সদস্যরা। সোমবার (১ জুলাই’) দুপুরে সিরাজগঞ্জ র‍্যাব -১২ এর সদর দপ্তরে এক সংবাদ