নিজস্ব প্রতিবেদক: বিভিন্ন কমিটিগুলো তছনছ করে দেওয়ার পর তারেক জিয়ার এবারের মনোযোগ বিএনপির স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠনের দিকে। স্থায়ী কমিটিতে পাঁচটি শূন্যপদ রয়েছে। এ ছাড়া অন্তত তিনজন স্থায়ী কমিটির সদস্য এখন দায়িত্ব পালনে রীতিমতো অক্ষম। এরকম বাস্তবতায় গোটা স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থায়ী কমিটির পুনর্গঠন নিয়ে তারেক জিয়া বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলছেন। বিশেষ করে তৃণমূলের সঙ্গে কথা বলছেন বলে জানা গেছে।’
ঈদে যখন বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছিলেন, ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, ঠিক সেই সময় লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলার তৃণমূলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে স্কাইপে বৈঠক করেছেন। তাদের সঙ্গে আন্দোলনের বিষয় এবং সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন।
ঈদের আগের দিন, ঈদের দিন এবং ঈদের পরদিন তিন দিনে তারেক জিয়া অন্তত ২০ জন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। আর এই সমস্ত আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে বলে যারা কথা বলেছেন, তাদের মধ্যে অন্তত তিনজন নিশ্চিত করেছেন।
তারেক জিয়া কাদেরকে স্থায়ী কমিটিতে নেওয়া যেতে পারে-এরকম একটি সম্ভাব্য তালিকা পাঠিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে তাদের মতামত চেয়েছেন। পাশাপাশি যারা স্থায়ী কমিটিতে আছে তাদের তালিকা পাঠিয়ে এদের মধ্যে কাকে কাকে রাখা উচিত এবং কাকে কাকে বাদ দেওয়া উচিত-সে বিষয়ে তৃণমূল তাদের মতামত দিয়েছে।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে একজন জেলার বিএনপি নেতা যিনি তারেক জিয়ার সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত, তিনি দাবি করেছেন, যে কোন দিন স্থায়ী কমিটির পুনর্গঠন হতে পারে। তারেক জিয়া এই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। তবে তা হবে গোপনে, যেভাবে বিএনপির বিভিন্ন কমিটিগুলোতে পদোন্নতি এবং পদাবনতি করা হয়েছে। ঠিক একইভাবে স্থায়ী কমিটিও পুনর্গঠন করা হবে একই কায়দায়।
বিএনপির একাধিক সূত্র দাবি করেছে যে, স্থায়ী কমিটি থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন, দলের দীর্ঘদিন অসুস্থ নেতা ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। এ ব্যাপারে তৃণমূলের সবাই তারেক জিয়াকে একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এদের দুইজনকে বিএনপির কোন আলঙ্কারিক পদ দেওয়া হবে। যেমন চেয়ারপারসনের বিশেষ উপদেষ্টা বা বিএনপির সম্মানিত উপদেষ্টা ইত্যাদি। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকেও স্থায়ী কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তবে সেই আলোচনা তারেক জিয়াই মাঝখানে থামিয়ে দিয়েছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে কারা আসতে পারে-এ ব্যাপারে তারেক জিয়া ২০ জনের একটি তালিকা বিভিন্ন নেতার কাছে দিয়েছিলেন যাদেরকে স্থায়ী কমিটিতে আনা যেতে পারে। এদের মধ্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, জহির উদ্দিন স্বপন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, রুমিন ফারহানা, শামা ওবায়েদ সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের নাম আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে বিতর্কিত আলোচিত ও বিতর্কিত সমালোচিত এবং আন্দোলনে নির্লিপ্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত আমানউল্লাহ আমানের নামও স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা যায় কি না সে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। বিএনপির নেতাদের মধ্যে শামসুজ্জামান দুদু, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের কথাও এখানে বলা হচ্ছে।
বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, তারেক জিয়া অপেক্ষাকৃত তরুণদেরকে স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে। দীর্ঘদিন যারা দলের জন্য সময় দিতে পারবেন এবং শ্রমও দিতে পারবেন। বয়োপ্রবীণ লোকদেরকে স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত না করার পক্ষে তিনি ইঙ্গিত করেছেন বলে বিএনপির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন। এ আলাপকালে তারেক জিয়া আবদুল্লাহ আল নোমানের মতো সিনিয়র নেতাদের নাম শুরুতেই নাকচ করে দিয়েছেন বলে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে।
এছাড়াও স্থায়ী কমিটিতে যাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ইকবাল মাহমুদ টুকুসহ কয়েকজন নেতৃবৃন্দের কার্যক্রম নিয়ে তৃণমূলের হতাশাকেও তিনি আমলে নিয়েছেন বলে বিভিন্ন নেতারা জানিয়েনে। তবে কখন, কীভাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন হবে সে বিষয়টি এখন পর্যন্ত কেউই জানে না।’