নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় পার্টির পর এবার বিএনপিতে গণ পদত্যাগের গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দলের সীমাহীন ব্যর্থ নেতৃত্ব, অযোগ্যতা এবং নেতাকর্মীদের খোঁজখবর না নেওয়া ইত্যাদি নানা অভিযোগে পদত্যাগ করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে অনেকে পদত্যাগের ব্যাপারে আগ্রহ জানিয়েছেন। আজ ছিল বিএনপির কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি। এই কর্মসূচিতে অধিকাংশ স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ ছিল হতাশাজনক। তাদের এই কর্মসূচি নিয়ে কোন আগ্রহ ছিল না।
বিএনপির তৃণমূলের নেতারা বলছেন, যখন আমরা এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছি, তখন এই কালো পতাকা কর্মসূচি দেওয়া অর্থ কী? বিএনপির নেতারা বলছেন, বিএনপি এখন বিএনপির কর্মসূচি মানছে না। নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে নির্দেশ এসেছিল কেউ যেন আদালতে না যায়, জামিন গ্রহণ না করে এবং সরকারকে অসহযোগিতা করে। কিন্তু সেই অসহযোগ আন্দোলনের ডাক উপেক্ষা করে বিএনপির নেতাকর্মীদের এখন আদালত পাড়ায় ভিড় বেড়েছে। আগাম জামিন নেওয়া, জেল থেকে মুক্ত করার জন্য বিএনপির নেতাদের প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে’।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নির্বাচনের পর আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। কিন্তু নির্বাচনের পর সরকার গঠিত হয়েছে এবং সরকার গঠিত হওয়ার দু সপ্তাহ পরে বিএনপির কর্মসূচি দিয়েছে সেই কর্মসূচি বিএনপির অনেক নেতাদের কাছে হাস্যকর। তারা বলছেন, এই ধরনের কর্মসূচির দিয়ে আর যাই হোক, সরকারের পতন ঘটানো অসম্ভব ব্যাপার হবে।
বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলছেন, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল নির্বাচনের পরপরই মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসবে। বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। কিন্তু নির্বাচনের পরে দেখা গেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞায় দিচ্ছে না। ফলে বিএনপি ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে বলেও অনেকে মনে করেন।’
বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ে একাধিক নেতা বলছেন, দলের যে ধরনের কর্মকাণ্ড, তাতে তারা হতাশ হচ্ছেন এবং এভাবে আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করে কোন কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়। আর এই কারণেই তারা পদত্যাগের কথা ভাবছেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর এই শীর্ষ নেতাদের পদত্যাগ করা উচিত ছিল। অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্বকে সামনে আনা উচিত ছিল এবং দলের খোলনলচে পাল্টে ফেলা দরকার ছিল। কিন্তু বাস্তবে সেটি করা হয়নি। যে কারণে এখন বিএনপিতে নতুন করে হতাশা নেমে এসেছে। বিএনপির মধ্যে নতুন প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। কিসের জন্য রাজনীতি করছে, কারা রাজনীতি করছে এই বিষয়টি নিয়ে এখন বিএনপিতে চলছে নানারকম বিতর্ক এবং আলাপ-আলোচনা। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির হতাশ নেতাকর্মীরা রাজনীতি ছেড়ে দেয়া বা পদত্যাগের কথা ভাবছেন। বিএনপিতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন নেতা তাদের পদত্যাগের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।’
বিএনপির একজন নেতা বলছেন, দলের মাঠ পর্যায়ের নেতারা সামান্য ভুল করলেই তাদের পদ কেড়ে নেয়া হচ্ছে, দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। কিন্তু শীর্ষ নেতারা যখন ভুল পথ দেখাচ্ছেন, ভুল রাজনীতি করছেন তখন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আসলে বিএনপি কী অর্জন করতে চায়, কোথায় যেতে চায় সেই বিষয়টি এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। আর এ কারণেই হতাশা থেকে খুব শিগগিরই বিএনপিতে গণপদত্যাগের হিড়িক শুরু হবে বলেই একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে।’