জহুরুল ইসলাম, বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ৩ নিহতদের লাশ কবরস্থান থেকে উত্তোলনে অনিহা প্রকাশ করেছে। এজন্য না সংবাদ সন্মেলনও করেছে নিহতদের স্বজনরা।
রোববার (৩ নভেম্বর) সকালে খুকনী ইউনিয়নে নিহত ইয়াহিয়ার নিজ বাড়িতে এই সংবাদ সন্মেলনে দাবী করে করেন ইয়াহিয়ার স্ত্রী শাহানা খাতুন। এছাড়া নিজ নিজ বাড়িতে মাদ্রাসা ছাত্র হাফেজ সিয়াম হোসেনের বাবা আব্দুল কদ্দুস ও কলেজ ছাত্র শিহাব হোসেনের মা শাহনাজ বেগমও সংবাদ সম্মেলন করে।
এ সময় নিহত ইয়াহিয়া’র স্ত্রী শাহানা খাতুন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ৪ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আমার স্বামী ইয়াহিয়া পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। এই ঘটনায় আমি মামলা করতে ইচ্ছুক ছিলাম না কিছু লোক এসে আমাদের পুরো পরিবার ও সংসারের দায়িত্ব নেন তারপর তারা আমার কাছে থেকে একটা সই নেয়। এরপর মুখে মুখে জানতে পারি তারা এই সই দিয়ে থানায় এজাহার দিয়েছে। মামলার বিষয় আমি কিছুই জানি না। আমার স্বামীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলন করতে দেবোনা। নতুন করে আর শোক নিতে পারবো না। স্বামী হারিয়ে এমনিতে আমরা দিশেহারা হয়ে গিয়েছি। এখন মরা মানুষকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে। আমার চাওয়া একটাই আমার স্বামীর যেনো শহীদের মর্যাদা পায়।
মাদ্রাসা ছাত্র হাফেজ সিয়াম হোসেনের বাবা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলে থানার সামনে পুলিশের গুলিতে মারা যান আমরা খবর পেয়ে গিয়ে দেখি ছেলের লাশ এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ওখান থেকে আমার ছেলের লাশ নিয়ে এসে দাফন করি। কে বা কারা এ বিষয় মামলা করেছে, মামলার বাদী কে? তাকেও আমরা চিনি না আমাদের কাছে থেকে মামলা বিষয়ে অনুমতি নেয় নাই কেউ। আমার ছেলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলন করবে বলে পুলিশ এসে বলে গেছে। আমার ছেলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলন করতে দিবোনা। আমরা তো মামলা করি নাই, লাশ কেন তুলবে। পুলিশের গুলিতে আমার ছেলে মরেছে, পুলিশও মরেছে, এতে সমান সমার হয়েছে। এ মামলা প্রত্যাহার চাই।
অন্য দিকে কলেজ শিক্ষার্থী শিহাব হোসেনের মা বলেন, আমার সন্তান শিহাব হোসেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে মারা যান, আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। সেজন্য আমরা পুরো পরিবার চরম ভাবে কষ্ট পাচ্ছি। এর জন্য মামলা দিয়ে কোন নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি আমরা করতে চাই না। কে মামলা দিয়েছে তাকে আমরা চিনি না। আমরা কাউকে মামলা দেওয়ার অনুমতি দেইনি আমিতো মামলা করি নাই। তাই মামলা চালানোর কোন প্রশ্নই আসে না। আমি চাই এই মামলা প্রত্যাহার করা হোক। পুলিশ যেন এই মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। অহেতুক নিরাপরাধ লোকদের আসামী করে শহীদ সন্তানের আত্মাকে কষ্ট দিতে চাই না, আর আমিও পাপের ভাগিদার হতে চাই না। মৃত দেহ যেন কাটা-ছেড়া না করা হয়। এই মামলা যেন প্রত্যাহার করা হয়। আর যারা উদ্দেশ্য মূলকভাবে রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্য আমার সন্তানের লাশকে ব্যবহার করে ব্যবসা করতে চায়, নিরাপরাধ ব্যক্তিদের নামে মামলা দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এ স্বাধীনতা তাদের প্রতি যেন যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেখানো হয়। এবং আমাদের পরিবারের চলার মত ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
সংবাদ সন্মেলন নিহতের স্বজন ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।