নিজস্ব প্রতিবেদক: গত কয়েক বছর ধরে সব নির্বাচন বয়কট করেছে বিএনপি। বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করার সঙ্গেই হরতালের ডাক দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু এবার নিজেদের অবস্থান বদল করতে পারে বিএনপি। দলের অনেক নেতাই মনে করছেন নির্বাচন বয়কট করার যে সিদ্ধান্ত তা পরিবর্তন করার সময় এসেছে। সামনেই বাংলাদেশের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। তার আগেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপিতে দুধরনের মত তৈরি হয়েছে। এবার নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে দলের একাংশের অবস্থান জোরালো হচ্ছে। এইসঙ্গেই হরতাল-অবরোধের মতন পদক্ষেপ না নেওয়ার পক্ষেও মত দিচ্ছেন অনেকেই। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। যদিও দলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা দেওয়া হয়নি। তবে এ ব্যাপারে দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দেওয়া হবে না বলে বিএনপির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে বিএনপির এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশলের ওপর।
বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, মূলত দুটি কারণে হাইকমান্ড এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর একটি কারণ হলো এবার আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন উন্মূক্ত রাখবে এবং কাউকে নৌকা প্রতীক দেবে না বলে একটি গুঞ্জন রয়েছে। অর্থাৎ দলীয় প্রতীকে এবার আর উপজেলা নির্বাচন হবে না। আগের মতো বিভিন্ন প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে এমন একটি আলোচনা আওয়ামী লীগের মধ্যে শোনা যাচ্ছে। আর শেষ পর্যন্ত যদি এমনটি হয় তাহলে বিএনপিও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে বিএনপি তাদের প্রার্থীদের ব্যাপারে উদার নীতি গ্রহণ করবে। অর্থাৎ যারা নিবাচন করবে তাদের বিরুদ্ধে কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।’
বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো সংগঠন গোছানো। বিএনপি মনে করছে যেহেতু এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে না এবং দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হলে বিএনপির আগ্রহী প্রার্থীদের দল উপেক্ষাও করবে না। এর ফলে তৃণমূলে সংগঠন গোছানোর একটি বড় সুযোগ পাবে। কারণ এমনিতেই গ্রেপ্তার মামলায় বিএনপি এখন বিপর্যস্ত। দলের সাংগঠনিক অবস্থা ভেঙে পড়েছে। এমন অবস্থায় নেতাকর্মীরা নির্বাচন করার সুযোগ পেলে তৃণমূলের সাংগঠনিক অবস্থা শক্তিশালী হবে। নেতাকর্মীরা নতুন করে উজ্জীবিত হওয়ার সুযোগ পাবে।
বিএনপি মনে করছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং সাধারণ মানুষের কাছে থেকে সরে যাচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির রাজনীতিতে চাঙ্গাভাব ফিরে আসবে। এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। এর মাধ্যমে বিএনপি স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরতে পারবে। বিএনপি উপজেলা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলে দলের নেতাকর্মীরা আবার সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পাবেন। এবার উপজেলা নির্বাচনে না গেলে যে ভুল হবে তা কাটিয়ে ওঠা বিএনপির জন্য কঠিন হবে।
তবে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশলের ওপর। এখন দেখার বিষয় শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ তার কি কৌশল গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগ কি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবে নাকি আগের মতোই নির্বাচন উন্মূক্ত রাখবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।’