
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম রাইসির মৃত্যুর পর দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ দাঁড়িয়েছে দ্রুত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন করা। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (২৮ জুন) দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে চলেছে। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুর পর ইরানে যে নির্বাচন হতে চলেছে সেখানে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অনুগত প্রার্থীদের আধিপত্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ দেশটির গার্ডিয়ান কাউন্সিল এ বিষয়ে খুব কঠোর নীতি অবলম্বন করেছে।
এবারের নির্বাচনে প্রার্থীতা পেতে মোট ৮০ জন নিবন্ধন ফরম পূরণ করেছিলেন। যার মধ্য থেকে মাত্র ৬ জনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য অনুমোদন দিয়েছে গার্ডিয়ান কাউন্সিল। বলা হচ্ছে গার্ডিয়ান কাউন্সিল খামেনির অনুগত প্রার্থীদের কেবল অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া তাদের অনুমোদনে যে বিতর্কটি সৃষ্টি হয়েছে তা হচ্ছে দেশটির সাবেক দুই বারের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদকে তারা এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীতার অনুমোদন করেনি। কথিত আছে আহমেদিনেজাদের সঙ্গে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার রাজনৈতিক বৈরিতা রয়েছে। ইরানের নির্বাচনকে কেন্দ্র এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এদিকে ইরানে ২০২২ সালে হিজাব আইন লঙ্ঘন করায় নৈতিক পুলিশের হাতে নিহত হয় মাহসা আমিনি। তার মৃত্যুর পরই দেশটিতে ব্যাপক আকারে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। যদিও দেশটির সরকার শক্তহাতে সেই বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়। কিন্তু দেশটির তরুণ সমাজ এ আন্দোলকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যার প্রভাব শুক্রবারের নির্বাচনে পড়বে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।
বিক্ষোভের ঘটনার রেশ কাটলেও ইরানে গত মে মাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর দেশটিতে নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকট সমাধানে ইরান কর্তৃপক্ষ নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। শুক্রবার (২৮ জুন’) নতুন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবার ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কিন্তু এ নির্বাচনে ভোটদানে দ্বিধাবিভক্তিতে ভুগছে ইরানের তরুণ ভোটাররা।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ছয়জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন রক্ষণশীল ও একজন মধ্যপন্থী। দেশটিতে নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয় দেখভালের দায়িত্বে থাকা গার্ডিয়ান কাউন্সিল তাদের অনুমোদন দিয়েছেন। তাঁরা হলেন পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ, পরমাণু কর্মসূচিবিষয়ক সাবেক মধ্যস্থতাকারী সাইদ জালিলি, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তফা পোউর মোহাম্মাদী, তেহরানের মেয়র আলী রেজা জাকানি, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট আমির হোসেইন গাজিজাদেহ হাশেমি ও পার্লামেন্ট সদস্য মাসুদ পেজেশকিয়ান। এই ছয়জনের মধ্যে মাসুদ পেজেশকিয়ান ছাড়া সবাই রক্ষণশীল বলয়ের।
প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা নির্বাচনে জয় পেতে প্রচার চালাচ্ছেন। ইরানে মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৮ কোটি ৫ লাখের বয়স ৩০ বছরের নিচে। এদের মধ্যে ৬০ শতাংশ ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহিত করতে পাঁচ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জোরেসোরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।’
পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ২০২২ সালে ইরানে সৃষ্ট বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন ২২ বছর বয়সী আতুসা। তবে ওই বিক্ষোভ দমনে যাঁরা কাজ করেছিলেন, তাঁদের একজন ছিলেন ২৬ বছর বয়সী রেজা। দুই বছর পর ইরানের এই দুই তরুণের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মতবিরোধ রয়ে গেছে। এই বিভক্তির বিষয়টি ২৮ জুন ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলকে রূপ দেবে।
এছাড়া গত আট মাসের বেশি সময় ধরে হামাস-ইসরাইল যুদ্ধের ফলে মধ্যেপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে উত্তেজনা চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। এই যুদ্ধের জের ধরেই দামেস্কের ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালায় ইসরাইল। এতে তেহরানের বেশ কয়েকজন উচ্চ পর্যায়ের নেতা নিহত হন। এরপর প্রতিশোধ নিতে ইসরাইলের ভূখণ্ডে প্রথমবারের মতো শতাধিক ড্রোন হামলা চালায় ইরান। যদিও ওই ছায়া যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এছাড়া পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য ক্রমাগত পশ্চিমা চাপের ফলে ইরানের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সামাজিক পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব চলমান রয়েছে। এরমধ্যে রাইসির মৃত্যুটিও একধরণের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার লড়াইয়ের জন্ম দিয়েছে। এসব পরিস্থিতিকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের নির্বাচন।
তবে এবার ইরানের নির্বাচন অবাধ বা প্রতিযোগিতামূলক হবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন পর্যবেক্ষকরা। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন প্রার্থীর অনুমোদন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত প্রভাব রয়েছে।’