নিজস্ব প্রতিবেদক: গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশন শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। ড. ইউনূস ছাড়াও ১৩ জন এই অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে যখন এই অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দেওয়া হল তার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে সোমবার ২৯ জানুয়ারি শতাধিক আন্তর্জাতিক বিশিষ্ট ব্যক্তি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে একটি বিবৃতি দিয়েছে। এই বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতা মধ্যে রয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর। এ ছাড়াও নোবেলজয়ী যারা ড. ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন নাদিয়া মুরাদ, মারিয়া রেসার সহ ১৬ জন শান্তিতে নোবেলজয়ী। ৬ জন সাহিত্যে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন। এছাড়া জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন সহ বিশ্বের শতাধিক ব্যক্তি এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।
এই বিবৃতিতে ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রহসনমূলক বলে মন্তব্য করা হয়েছে এবং এটা বন্ধের জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। এই বিবৃতির পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে। তবে ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলার রায় এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযোগপত্র সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে যে, ড. ইউনূসের ব্যাপারে সরকারের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি। আর এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের নতুন করে টানাপোড়েন হতে পারে এমন শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। কারণ ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অত্যন্ত মানে প্রিয়ভাজন একজন ব্যক্তি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আর তাই নিজে বাঁচার জন্য তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রভাবিত করতে পারেন এমন এমন ধারণাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অতীতেও তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। সেই সময় হিলারি ক্লিনটন ড. ইউনূসের জন্য টেলিফোন করেছিলেন। এখন ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযোগপত্র দাখিলের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও কী প্রতিক্রিয়া দেখায় তা নিয়ে বিভিন্ন মহল নানারকম পূর্বভাস দিচ্ছে।’
তবে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, নির্বাচনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের যে সম্ভাবনাটুকু সৃষ্টি হয়েছিল, তা নতুন করে সংকটে পড়তে পারে। নির্বাচনের আগে থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন লক্ষ্য করা গিয়েছিল। এই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সুশাসন, গণতন্ত্র ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হলে ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হবে ইত্যাদি ঘোষণাও দিয়ে রাখা হয়েছিল বাংলা বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংযত অবস্থান গ্রহণ করে আছে।’
বাংলাদেশে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি এমন বক্তব্যের পরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে। যদিও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধানরা টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানালেও মার্কিন প্রেসিডিয়াম জো বাইডেন এখন পর্যন্ত অভিনন্দন জানায়নি। এর মধ্যে ইউনূস ইস্যু নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি সরকারকে নতুন জটিলতায় ফেলতে পারে কিনা এ নিয়ে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। কারণ ড. ইউনূসের কারণেই বাংলাদেশে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ হয়েছিল। ড. ইউনূসের কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল এমন কথাও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়। সেক্ষেত্রে ইউনূসের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময় যে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে সেটি মার্কিন নীতি নির্ধারকদেরকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণে প্ররোচিত করতে পারে এমন শঙ্কাও কেউ কেউ প্রকাশ করছেন।’